ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাংলার প্রাণের কাছে

চাল ভাজা ছাতুর সংসারে ভাবনাহীন ভবিষ্যৎ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
চাল ভাজা ছাতুর সংসারে ভাবনাহীন ভবিষ্যৎ চাল ভাজায় ব্যস্ত বিষু মনি, ছবি: বাংলানিউজ

মিঠাপুকুর (রংপুর) ঘুরে এসে: বিষু মনি চেহারায় খাটুরে। তবে স্বভাবে চনমনে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যেও ছাতা হাতে পারিবারিক কাজে ক্লান্তিহীন আত্মনিয়োগ।

জানালেন, চালের দাম বেশি। তাও আবার মোটা চাল।

এখন যে দামে বিকিকিনি তাতে পর্যাপ্ত কেনার সামর্থ্য নেই। কায়দা করে চাল ভেজে ছাতু করে খান। এতে পরিমাণে বাড়ে, সকালের নাস্তাটা অন্তত চলে যায়।

বিষু ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ওঁরাও (ওরাওঁ) গোত্রের নারী। বয়স ৩৫ বা ৩৬। স্বামী মানিক তিরকীর সঙ্গে সমানতালে কৃষি কাজ করা তার জীবিকা। ছেলেমেয়ে আছে, যায় পাঠশালায়। আগের দিনের মতো তাদের জীবন আর নেই, অন্তত সন্তানদের লেখাপড়ার একটা বন্দোবস্ত হয়েছে। কিন্তু অভাব কাটেনি। মানুষের জমিতে আধি (বর্গা) কাজ করা এই আদিবাসী শ্রমিক তাই অনেকটা আফসোসের সুরেই বললেন, কেউ খোঁজ নেয় না গো।
বাংলানিউজের সঙ্গে কথার সময় বিষু চাল ভাজায় ব্যস্ত। এরই ফাঁকে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, চালের খুত ভেজে ছাতু করবো। ভাত খেয়ে পোষায় না বলেই প্রতিদিন সকালে লবণ-জল-মরিচ দিয়ে খাওয়া হয় ছাতু। নিজেদের এক বিঘা জমি আছে। তাতে উৎপাদন চাহিদা মেটাবার মতো নয়। স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সংসারে আয় কম, টানাপড়েন বেশি। শুধু আমরা কেন এখানকার অনেক পরিবারই এমন করে।
 
কথায় কথায় লাজুক ভঙ্গিতে মধ্যবয়সী এই নারী স্থানীয় সুরে বলেন, চেহারা-সুরত সব নষ্ট হয়ে গেছে। আগে কী সুন্দর ছিলাম! এখন চাপা ভেঙেছে, এতো কাজ করলে কি আর শরীরে সয়! তবে কিছু করারও নেই, সংগ্রামী জীবনে ভাবি না ভবিষ্যৎ!
 
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বৌদ্ধ বিহার এলাকায় ওঁরাওদের বাস। এখানে গুটি কয়েক মুসলিম পরিবার থাকলেও ওঁরাও প্রায় ১৭০-১৮০ পরিবার। আশেপাশের জমি চাষাবাদেই জীবন-জীবিকা। বহু বছর আগে যৌথ পরিবারে বাস করলেও এখন একক হয়েই থাকা। তিন বেলা ভাতের অভ্যাসে বড় হওয়া জনগোষ্ঠীটির খাদ্যাভাস এখন ছাতু, ভাত-সবজি ও ভাত-ডাল-শাক। মাঝে মধ্যে খাওয়া পড়ে আমিষ, সঙ্গে ডিম।
 
নৃবিজ্ঞানীদের মতে, তারা অস্ট্রিক এবং ভাষাতাত্ত্বিক সূত্রে দ্রাবিড়। অধিকাংশ গবেষক মনে করেন, তারা দ্রাবিড়ভাষী কুড়ুখ জাতির উত্তর পুরুষ। ১৮৮১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বরেন্দ্র অঞ্চল ছাড়াও ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালীতে তাদের বাস। তবে এখন বরেন্দ্র ভূমিতেই তারা টিকে আছে।
 
বিষুর ননদ পাঁচনী তিরকী শোনান জীবনযাত্রার কথা। বলেন, এ সমাজে সবাই মিলে কাজ করি। পিতৃপ্রধান পরিবার হলেও নারীদের কষ্টটা একটু বেশি। তাদের বাইরে যেমন কাজ করতে হয়, তেমনি ঘরে রান্নাবাড়ায় একাই সব সারতে হয়। এছাড়া সকাল অথবা সন্ধ্যা, কিংবা দুবেলাতেই সবাই মিলে প্রার্থনা করি। যাই পাশের বেণুবন বৌদ্ধ বিহারে।
 
বিহারের পণ্ডিত ভদন্ত জ্যোতিপাল স্থবির থেরের সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই উপাসনা কেন্দ্র উত্তরবঙ্গের প্রথম বৌদ্ধ বিহার। ধীরে ধীরে আরও বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন কেবল রংপুরেই মোট নয়টি।
 
জ্যোতিপাল বলেন, বেণুবনে প্রতি সকাল ও সন্ধ্যায় সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। ওঁরাও সম্প্রদায়ের মানুষজন এখানে যোগ দেন; শত কাজ ও ব্যস্ততার মাঝে ধর্মীয় চর্চা তাদের মধ্যে গভীর আন্তরিকতার উন্মেষ ঘটায়।

আরও পড়ুন:
জন্মভিটাতেই অস্তিত্ব সংকটে বেগম রোকেয়া
দুই ভাইয়ের বিরোধে আ'লীগের সর্বনাশ!
মন্ত্রী হবেন টিপু সেই প্রভাব ভোটে!
** টিপুর বিপক্ষে এমদাদেই ভরসা
একবার খেলে ভোলা যায় না হাড়িভাঙার স্বাদ
ঈদে ট্রেনেই নিশ্চিন্ত যাত্রা
‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’
‘লাইসেন্স দেন-ট্যাক্সও বাড়ান, মারেন শুধু বিড়ি শ্রমিকরে’
মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা!
‘সুষ্ঠু ভোট হলে এমপি জাপার’
বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ!
হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!

বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর! 

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলার প্রাণের কাছে এর সর্বশেষ