ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

চরের বুকে ‘বীজ সয়াবিনে’র চাষ

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
চরের বুকে ‘বীজ সয়াবিনে’র চাষ

লক্ষ্মীপুর: দেশের উৎপাদিত সয়াবিনের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ উৎপাদন হয় লক্ষ্মীপুরে। এ জন্য এ জেলাকে ‘সয়াল্যান্ড’ বলা হয়।

সাধারণত ডিসেম্বরের শেষভাগে এবং জানুয়ারির পুরো সময়টাতে জমিতে সয়াবিনের বীজ বোনা হয়।

তবে সয়াবিন চাষাবাদের জন্য যে বীজ সয়াবিন প্রয়োজন পড়ে, সে সয়াবিনের চাষাবাদ করা হয় অসময়ে। মৌসুমি সয়াবিনের চেয়ে বীজ সয়াবিনের উৎপাদন কম এবং চাষাবাদ খরচ বেশি হলেও চড়া দামে বিক্রি করা যায় বীজ সয়াবিন। ফলে চরের কৃষকরা মৌসুমের আগেই বীজ সয়াবিনের চাষাবাদ করেন।  

কৃষকরা বলেন, উৎপাদন ব্যয় বেশি এবং ফলন কম হলেও বীজ সয়াবিনের দাম সাধারণ সয়াবিনের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। সাধারণ সয়াবিনের মণ যেখানে বিক্রি হয় দুই হাজার থেকে ২২শ’ টাকায়, সেখানে বীজ সয়াবিনের মণ আট হাজার থেকে নয় হাজার টাকা। এতে কৃষকরা অসময়ে সয়াবিন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।  

জেলার রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন চরে চাষ করা হচ্ছে বীজ সয়াবিন। এছাড়া আরেকটি উপকূলীয় এলাকা কমলনগরেও আগাম বীজ সয়াবিনের চাষ করা হচ্ছে।  

রায়পুরের দক্ষিণ চর বংশী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক চরের জমিতে আমন ধান চাষের পরিবর্তে বীজ সয়াবিনের চাষাবাদ করেছেন। কেউ কেউ এরই মধ্যে ক্ষেত থেকে সয়াবিন গাছ কাটতে শুরু করেছেন৷ আবার কোনো কোনো ক্ষেতের সয়াবিন পাকার সময় হয়ে এসেছে। এ বীজ সয়াবিন থেকে চলতি মৌসুমে সয়াবিনের বীজ বপন করা হবে।  

উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মোল্লার হাটের টুনির চরের কৃষক সেরাজুল হালদার বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা আশ্বিন মাসের শেষের দিকে বীজের জন্য সয়াবিনের বীজ জমিতে বোনা হয়। মাঘ মাসের দিকে সয়াবিন পাকতে শুরু করে। আবার এ সয়াবিনের বীজ দিয়েই ওই জমিতে সয়াবিনের চাষাবাদ করা হয়। চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে বীজ সয়াবিনের চাষ করেছি। এতে ব্যয় হয়েছে ১৪-১৫ হাজার টাকা। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আশা করছি, এক একরে ২০-২৫ মণ বীজ সয়াবিন হবে।  

তিনি বলেন, টুনির চর ছাড়াও উপজেলার চর কাচিয়া, চর খাসিয়া, কানি বগার চর, চর বংশী এবং পাশের ভেলার চরের কৃষকরা বীজ সয়াবিনের চাষাবাদ করেন। মেঘনার উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় এ চরের মাটি এবং আবহাওয়া বীজ সায়বিন চাষের উপযোগী। এছাড়া কৃষকরা লাভবান হওয়ায় এ অঞ্চলের চরগুলোতে বীজ সয়াবিনের চাষাবাদ বেশি হচ্ছে।  

একই এলাকার কৃষক খান মোহাম্মদ বলেন, এক একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি, ৪০ মণ সয়াবিন উৎপাদন হবে।  

আরেক কৃষক মমিন উল্যা বলেন, দুই একর জমিতে বীজ সয়াবিন চাষ করেছি। ঝড়ের কারণে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পোকামাকড় বেশি আক্রমণ করেছে। তাই আমার ফলন কম হবে। তবে বীজ সয়াবিনের উচ্চ মূল্য হওয়ায় খরচ পুষিয়ে আসবে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষাবাদ হয়। এ জন্য চলতি মৌসুমে প্রয়োজন ২২শ’ টন সয়াবিন বীজ।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বীজ বোনার জন্য এক হাজার টন সয়া বীজ সরকারিভাবে বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। বাকি ১২শ’ টন বীজ সয়াবিন কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন করা হয়। রায়পুরের চরাঞ্চলে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বীজ সয়াবিন চাষ করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, কৃষকরা যাতে ভালোভাবে বীজ সয়াবিন উৎপাদন করতে পারেন, সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।