ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সমালয় পদ্ধতির বীজতলা তৈরিতে ঝুঁকছেন কৃষকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
সমালয় পদ্ধতির বীজতলা তৈরিতে ঝুঁকছেন কৃষকরা

ভোলা: দ্বীপ জেলায় ভোলায় আধুনিক প্রযুক্তির সিড সুইং মেশিনে চাষাবাদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই এ মৌসুমে কৃষকরা ঝুঁকছেন সমালয় পদ্ধতিতে বোরো চাষে।

শ্রমিকের মজুরি, অতিরিক্ত সময় ও ব্যয় বাঁচাতে কৃষকরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বোরোর বীজতলা তৈরি করছেন। সমালয় পদ্ধতিটি মূলত ট্রে বা পলিথিনে বিশেষ কায়দায় চাষাবাদ। এতে ধানের চারা জন্মাতে সময় নেয় মাত্র থেকে ১০ দিন।  

পদ্ধতি সহজ হওয়ায় কৃষকরা এর ব্যবহার করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। পাশাপাশি কম জমিতে বেশি ফলন পাবেন বলেও মনে করছেন তারা। জেলার সর্বত্র এ পদ্ধতি জড়িয়ে দিতে কৃষকদেরকেও উদ্বৃত্ত করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছু দিন আগেও বোরো আবাদে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণে কৃষকদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। বিশেষ করে শ্রমিক সংকট, বাড়তি সময় এবং অর্থের অতিরিক্ত খরচ হতো।  

কিন্তু এখন আর সে চিত্র নেই। দ্বীপ জেলা ভোলায় কৃষিতে এসেছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। সমালয় পদ্ধতি ছাড়াও জেলার কৃষকরা ব্যবহার করছেন সিড সুইং মেশিন। এ মেশিনের মাধ্যমে বীজতলা তৈরি করা যায় খুব সহজে।  

সাধারণ পদ্ধতির চাষে একটি জমিতে ৩৫- থেকে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। তবে সমালয় বা সুইং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে ৫ থেকে ১০ জন কৃষক হলেই চলে। ফলে শ্রমিক খরচ বেঁচে যায়। তা ছাড়া কম সময়ে শত শত হেক্টর জমিতে একসঙ্গে বীজতলা তৈরি করা সম্ভব।

ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সি গ্রামের কৃষক রহিম হাওলাদার বলেন, সনাতন পদ্ধতির চেয়ে সমালয়ে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি অত্যন্ত সুবিধাজনক। কম সময় লাগে, ঝামেলাও অনেকটা কম। এবার ৫ গণ্ডা জমিতে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করছি। আশা করি ভালো ফলন পাবো।

১০ গণ্ডা জমিতে এবার বোরো আবাদ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষক আ. রব। তিনি বলেন, এবারই প্রথম আধুনিক পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছি। আগে কাঁদা-পানিতে বীজতলা তৈরি করতে হতো। কখনও জোয়ারের পানিতে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। মেশিনে বীজতলা তৈরি মোটামুটি সুবিধাজনক। প্রতি বছরই এ পদ্ধতি ব্যবহার করবো।

কৃষক মাসুদ ও জসিম বলেন, যেহেতু শ্রমিক কম লাগে, খরচও কম হয়। অন্যদের দেখে আমরাও এ পদ্ধতি গ্রহণ করেছি।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে গত তিন বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার হলেও এ বছর চারটি প্রদর্শনীতে সুইং ও সমালয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এ পদ্ধতির শুরুতেই মাটি মিহি করতে হয়। তারপর জৈব সার মিশিয়ে মেশিনের মাধ্যমে মিশ্রণ ঘটিয়ে ট্রে বা পলিথিনে মিশ্রিত মাটি জমিতে রাখতে হয়। তারপর পলি কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখলে এক সপ্তাহের মধ্যে বীজ থেকে চারা উৎপাদন হয়। এ পদ্ধতিতে এক সঙ্গে বহু জমির বীজতলা তৈরি সম্ভব। যে কারণে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। এ পদ্ধতি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।

এ ব্যাপারে ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, এ পদ্ধতি পুরো জেলায় ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের উৎসাহ করছি। এ বছর জেলায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে ২ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে।  

তিনি আরও বলেন, এ মৌসুমে ২০০ একর জমিতে সমালয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
এসএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।