বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ইরি-বোরো খেতে মাজরা ও ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে ধানসহ শুকিয়ে যাচ্ছে ধান গাছের শীষ।
তবে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, ধানে ব্লাস্ট রোগের যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, তা পরিমাণে খুবই কম। এতে উৎপাদনে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শস্যভান্ডার খ্যাত আগৈলঝাড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫টি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৪শত ২০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এসব জমিতে কৃষকরা উচ্চফলনশীল ব্রি-৩৬, ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ ও স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করেছেন। মৌসুমজুড়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে কিছু কৃষকের জমিতে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবও দেখা দিয়েছে।
কৃষকরা জানান, চলতি মাসের শুরু থেকেই হঠাৎ করে উপজেলার বেশ কিছু এলাকার ধান খেতে এ ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলার বরিয়ালী গ্রামের সবুজ কাজী বলেন, বোরো আবাদ শুরুর দিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। তাই সবাই ভালো ফলন আশা করেছিল। কিন্তু ধানে পাক ধরার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির ওষধ ছিটিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে আমরা ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।
উপজেলার বাশাইল গ্রামের কৃষক অনন্ত বিশ্বাস জানান, আমি চলতি বছর ৬০শতাংশ জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেছি। এতে আমার প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধান বের হওয়ার পরে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় আশ-পাশের জমির ধান রক্ষায় ৪০শতাংশ জায়গার ধান কেটে ফেলতে হচ্ছে। একই রকম অবস্থা হয়েছে বড়বাশাইল এলাকার কৃষক শৈলেন দাসের। তার জমির ধানও কাটতে হচ্ছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ হালদার বলেন, কৃষকরা নিজেরা খাওয়ার জন্য চিকন ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেছিল। এই ব্লাস্ট রোগ শুধু ব্রি-২৮ জাতের ধানেই বেশি হয়েছে। এই রোগ হলে ধান গাছের পাতা কালো ও শীষ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এক খেতে এই রোগ দেখা দিলে পাশের খেতে কীটনাশক না দিলে ব্লাস্ট রোগ ওইসব খেতেও দেখা দিতে পারে। এব্যাপারে প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জাফর ইকবাল বলেন, ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ রোগের আক্রমণ ঠেকাতে প্রতি বিঘায় ১৬ লিটার বালাইনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। ওষুধ প্রথমবার দেওয়ার ১০ দিন পর আবার দ্বিতীয়বার দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ কৃষকই কৃষি অফিসের পরামর্শ না মেনে নিজেদের ইচ্ছে মতো করে কাজ করার চেষ্টা করেন, যার কারণে এ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, এ রোগ শুধু ব্রি-২৮ জাতের ধানেই বেশি হয়েছে। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিদিনই মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকের ক্ষেতে ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। তাদের পাশের ধান রক্ষা করার জন্য ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে কৃষকরা জানালে তাদের কি ধরণের কীটনাশক খেতে প্রয়োগ করতে হবে তার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৩
এমএস/ এসএম