ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

উপকূলে লবণ সহিষ্ণু ব্রি-ধানে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
উপকূলে লবণ সহিষ্ণু ব্রি-ধানে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা

পাথরঘাটা (বরগুনা): একটা সময় ছিল উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকরা লবণাক্ততার কারণে কৃষিজমিতে ফসল ফলাতে পারতো না, বছরে একবার ধান চাষ করলেও তা লবণের কারণে নষ্ট হয়ে যেত। প্রতি বছরই কৃষকদের লোকসানের ঘানি টানতে হতো।

ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে উপকূলের কৃষকদের কিছুটা মোড় ঘুরতে শুরু করে।

লবণাক্ত অঞ্চল খ্যাত উপকূলীয় বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা। এ উপজেলার মধ্যে অন্যতম কালমেঘা ইউনিয়নের আমড়াতলা গ্রামে ফসল ফলানোই যেখানে কষ্টসাধ্য ব্যাপার, সেখানে লবণ সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ধান ব্রি ৬৭, ৭৪ ও ৯৭ জাতের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।  

এতে করে তাদের মুখে হাসি ফেরার পাশাপাশি বিঘা প্রতি ২৩-২৪ মণ ধান পাবেন বলেও আশা করছেন তারা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর পরামর্শে প্রথমবারের মতো ২০২২-২৩ বোরো মৌসুমে তারা ব্রি ধান ৬৭, ব্রি ধান ৭৪ ও ব্রি ধান ৯৭ জাতগুলো চাষ করেন। সবগুলো জাতই অত্যন্ত ভালো হয়েছে। এতে কৃষকরা খুশি।

স্থানীয় কৃষক দলনেতা বাদল হাওলাদার বলেন, লবণাক্ত অঞ্চল হওয়ায় আমাদের এখানে কোনো ফসলই তেমন একটা ভালো হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে আমরা ব্রি ধান ৬৭, ব্রি ধান ৭৪ ও ব্রি ধান ৯৭ জাতগুলো এখানে চাষ করি। এই প্রথম ১০ বিঘা জমিতে আমরা এ জাতগুলো চাষ করি এবং সবগুলো জাতই অত্যন্ত ভালো হয়েছে।  

আব্দুর রহমান নামে অপর এক কৃষক বলেন, একটা সময় ছিল লবণাক্ততার কারণে এখানে কোনো ফসল ফলাতে পারিনি। আজ আমরা এখানে আবাদ করতে পারছি। এতে কৃষকরা খুশি, নতুন করে স্বপ্ন বুনছে। যেখানে ফসলই হতো না, সেখানে এখন বিঘা প্রতি ২৩-২৪ মণ ধান পাব বলে আশা করছি আমরা।  

এর আগে শুক্রবার (২৮এপ্রিল) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে আমড়াতলা গ্রামে পতিত জমিতে লবণ সহনশীল ব্রি ধান ৬৭, ব্রি ধান ৭৪ ও ব্রি ধান ৯৭ জাতের প্রদর্শনীর ওপর কৃষক মাঠ দিবস ও ফসল কর্তনের আয়োজন করা হয়।  

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট লবণ সহনশীল অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছে। তার মধ্যে ব্রি ধান ৬৭ ও ব্রি ধান ৯৭ অন্যতম। এই জাতগুলো ৮-১২ মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং জীবনকাল ১৪০-১৪৫ দিন।  

তিনি আরও বলেন, বরগুনা জেলার মতো উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলগুলোতে উন্নত পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই জাতটি চাষ করতে পারলে কোনো জমি আর পতিত থাকবে না এবং যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

এদিকে পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফারজানা তাসমিন বলেন, পুরো উপজেলায়ই লবণাক্ত থাকে। ব্রি ধান ৬৭ ও ব্রি ধান ৯৭ জাতগুলো ৮-১২ মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং জীবনকাল ১৪০-১৪৫ দিন। এ জাত চাষের ফলে পাথরঘাটায় কোনো জমি পতিত থাকবে না। এ ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের কৃষকদের এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এবং আগ্রহী করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।