ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

পথের পাশে ‘অসময়ের’ কাঁঠাল

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২৩
পথের পাশে ‘অসময়ের’ কাঁঠাল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে কাঁঠালের স্তুপ। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: প্রকৃতি কি দিনপঞ্জিকা মানে! বছর শেষে আবার কি ঘুরে-ফিরে আসে সেই ‘প্রিয়’ অথবা ‘অপ্রিয়’ সময়ের ফল বা ফসলাদিগুলো? পথপাশে কাঁঠালের স্তুপের এমন প্রাচুর্যতা এ প্রশ্নটাই জানান দেয়। স্তুপাকার কাঁঠাল যেন ঘোষণা দিচ্ছে এ মৌসুম ফলের জয়ধ্বনি।

আসলেই কি এখন কাঁঠালের সময়? কৃষি বিশেষজ্ঞ বলছেন- না। এখনো কাঁঠালের মৌসুম পুরোপুরিভাবে আসেনি। ‘মধুমাস’ নামে খ্যাত জ্যৈষ্ঠ আসতে এখনও কয়েকটা দিন বাকি।  

তবে তার আগেই দেখা মিলল জাতীয় ফলের সমারোহ।

সম্প্রতি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাঁতগাও চা বাগান সংলগ্ন মোছাই নামক স্থানে পাকা কাঁঠালের প্রাচুর্যতা পরিলক্ষিত। এ এলাকাটি মৌলভীবাজার জেলার শেষপ্রান্ত আর হবিগঞ্জ জেলার শুরুর পথ। পাইকাররা আশাপাশের এলাকা থেকে, বিভিন্ন পুঞ্জি থেকে সকালের দিকে কাঁঠাল নিয়ে এসে জড়ো করতে থাকেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা।

এখনকার পাইকাররা (ব্যবসায়ী) জানান, প্রায় দশ-পনের জন্য পাইকার আছেন মোছাইয়ে । যারা দূর-দূরান্তের ক্রেতাদের কাছে পাইকারি দরে কাঁঠাল বিক্রি করে থাকেন। এসব কাঁঠাল যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

স্থানীয় পাইকার সাদেক মিয়া বলেন, অল্প কিছুদিন হয় আমরা পাশের বাগান এবং পুঞ্জি থেকে কাঁঠালগুলো সংগ্রহ করে এখানে নিয়ে আসছি। বেচাবিক্রি তেমন ভালো না। ক্রেতারা কম দাম বলেন। আমরা তো বেশি দাম দিয়ে কিনে এনেছি, কমদামে বিক্রি করবো কীভাবে?

একেকটি কাঁঠালের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কাঁঠাল রয়েছে। একেকটির একেক আকার। ৪০০ টাকা দামের কাঁঠালের ওজন প্রায় ১৫/১৬ কেজি হবে। এই বাজারের কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। বাজার এখনো পুরোপুরি জমেনি। আরো কয়েকদিন পর বাজার জমে উঠবে।

‘বাজারে আগাম কাঁঠাল’ – প্রশ্নে উত্তরে এই পাইকার বলেন, কিছু কাঁঠাল তো বারোমাসি। সারাবছর পাওয়া যায়। তবে এগুলো সংখ্যা খুব কম। বেশির ভাগ কাঁঠালই জৈষ্ঠ্যের। যারা কাঁঠালের চাষ করেন তারা তো আগেভাবেই গাছ থেকে পেড়ে আমার মতো পাইকারদের দিয়ে দেন। আমি না কিনলে, আরেকজন পাইকার কিনে ফেলবে। কাঁঠাল চাষিরা এখন আর জৈষ্ঠ্যের জন্য বসে থাকেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, কাঁঠালের হারভেস্টোর টাইম (আহরণের সময়) আসেনি। আরো কিছুদিন দেরি আছে। তবে কেউ কেউ আগাম ফলন বাজারে নিয়ে আসছেন। এর পেছনে দুটো ব্যাপার আছে। প্রথম কারণটা হলো, বারোমাসি জাতীয় কিছু কাঁঠাল আগাম পোক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, অতি মুনাফা লাভের আশায় কৃষকরা বা সংশ্লিষ্টরা কাঁঠাল স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসছেন। তবে কাঁঠালের মৌসুম শুরু হয় নাই এখনো।   

দেশে কাঁঠালের বাজার

এ সম্পর্কে কাজী লুৎফুল বারী  বলেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া এবং বড়লেখায় কাঁঠালের একটা বেল্ট (সুনির্দিষ্ট এলাকা) আছে। কমলগঞ্জ থেকে শুরু করে কুলাউড়া হয়ে বড়লেখা অবধি। কাঁঠলের ভরা মৌসুমে আপনি ওই এলাকায় গেলে দেখবেন ট্রাকে ট্রাকে প্রচুর কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এছাড়াও সাঁতগাও চা বাগানের চা কন্যা ভাস্কর্যটা পর হয়েই মুছাই নামক একটা জায়গা আছে। এখানেও কাঁঠালের বাজার রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল এখানে প্রতিদিন কেনাবেচা হয়। আমাদের কিন্তু বাইরের কাঁঠাল খেতে হয় না। আমাদের মৌলভীবাজার বা হবিগঞ্জের কিছু কিছু স্থানে যে কাঁঠাল উৎপন্ন হয় সেটা দিয়েই আমাদের স্থানীয় চাহিদা পূরণ হয়ে যায় এবং অবশিষ্টগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদনকারী অঞ্চল ত্রিশাল, ভালুকা। তারপর টাঙ্গাইল এবং ময়মনসিংহের ওই বেল্টটাতে কিছু কাঁঠাল হয়। তবে কাঁঠালের জন্য প্রধান হলো ভালুকা অঞ্চল বড় কাঁঠালের এরিয়া। ওসব এলাকা থেকে আমাদের এদিকে কাঁঠাল আসতে হয় না। কারণ, মৌলভীবাজারে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপন্ন হয় বলে জানান তিনি।

কাঁঠালের প্রকারভেদ

এ প্রসঙ্গে কাজী লুৎফুল বারী বলেন, কাঁঠালের কিন্তু সুনির্দিষ্ট ভ্যারাইটিগুলো এখনো কৃষকদের মাঝে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেনি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কাঁঠালের ভ্যারাইটি বের করেছে। তবে কৃষকরা এখনো বাগান আকারে কাঁঠাল চাষ করেননি। ফলে সুনির্দিষ্ট কোনো কাঁঠালের ভ্যারাইটি বাজারে পাবে না। যেমন- আমরা বাজারে গিয়ে আম্রপালি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ফজলি, হাড়িভাঙ্গা ইত্যাদি নানা জাতের আমের ভ্যারাইটি পাই, সেরকম পাবেন না। কিন্তু আপনি কাঁঠালে বাজারে গিয়ে বলতে পারবেন না আমাকে বারি-১, বারি-২ জাতের কাঁঠাল দেন। বিক্রেতারাও এ শব্দ চিনবে না আর আপনাকে দিতে পারবে না।

রসালো কাঁঠাল চেনার উপায়

এ বিষয়ে কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বলেন, কাঁঠাল কিনতে বাজারে গিয়ে আমাদের কাঁঠালকে আঙুল দিয়ে টিপতে হয় বা থাপাতে হয়। নয়তো বিক্রেতাকে বলতে হয় যে, আমাকে ভালো একটা কাঁঠাল দিন। তখন ওরা থাপাথাপি করে বলে এটার কোষ শক্ত হবে বা নরম হবে। বাইরে থেকে কাঁঠালকে দেখে বুঝার কোনো উপায় নাই যে এ কাঁঠালের কোষ বড় হবে, নাকি ছোট হবে। এটা সম্পূর্ণই নিজের আর বিক্রেতার বিশ্বাসের উপর নিয়ে আসতে হয়। অনেক সময় নিজের পছন্দ মতো কাঁঠাল পাওয়া যায়, অনেক সময় যায় না।

 তবে এটা মৌলভীবাজারের কাঁঠালের যে ডাইয়ারসিফাইড ভ্যারাইটিগুলি আছে তার কোয়ালিটি তুলনামূলক ভালো বলে জানান কাজী লুৎফুল বারী।     

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২৩
বিবিবি/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।