ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সরকারের ধান কিনতে দেরি, কম দামেই বেচে দিচ্ছেন কৃষকরা

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৩
সরকারের ধান কিনতে দেরি, কম দামেই বেচে দিচ্ছেন কৃষকরা

বাগেরহাট: বাগেরহাট জেলার অন্তত ৮৫ শতাংশের বেশি ধান কেটে ঘরে তুললেও এখনো সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি।  

তাই নগদ টাকার প্রয়োজনে কৃষকরা বাধ্য হয়ে কম মূল্যে খোলা বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করছেন।

এ অবস্থায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাট কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের বোরো মৌসুমে বাগেরহাট জেলার নয় উপজেলায় ৬২ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টন ধান। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। দুই-চারদিনের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হয়ে যাবে।  

কৃষকরা খোলা বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে এক মণ হাইব্রিড মোটা ধান ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকায় এবং হাইব্রিড চিকন ও ২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা দরে।  

অন্য দিকে ২০২৩ সালের বোরো সংগ্রহের জন্য সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করেছে কেজি হিসেবে ৩০ টাকা আর মণ হিসেবে ১২০০ টাকা। এ হিসেবে একজন চাষি প্রতিমণ ধানে ৩৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কম পাচ্ছেন। এরপরও নগদ টাকার প্রয়োজনে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।  

বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বাগেরহাট জেলা থেকে ৫ হাজার ৫০৫ মেট্রিক টন ধান কিনবে সরকার। ৪ এপ্রিল এক চিঠিতে এ চাহিদা পত্র পাঠিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। তবে এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ বিষয়ক কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি জেলায়।  

কুচয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা ধান চাষি আবুল হোসেন বলেন, সরকার ৩০ টাকা কেজি দরে ধান কিনবে জেনে খুশি হয়েছিলাম। ভাবছিলাম সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু ঈদের আগেই ধান কেটে ঘরে তুলেছি, শ্রমিকদের মজুরি ও সারের দোকানে টাকা দেওয়ার জন্য মাত্র ৯০০ টাকা করে কেজিতে বেশ কিছু ধান বিক্রি করেছি। এখনও ৫০ মণের মতো ধান রয়েছে ঘরে, যদি তাড়াতাড়ি ধানগুলো সরকার নিত, তাহলে আমাদের অনেক লাভ হতো।

একই গ্রামের লতিফ শেখ বলেন, ১০ হাজার টাকা দরে নগদ টাকায় ৫ বিঘা জমিতে ধান করেছি। সার, ওষুধ ও শ্রমিকের খরচের পর লাভ করা অনেক কষ্ট। সরকারি দামে বিক্রি করতে পারলে ঋণ শোধ করে হয়তো কিছু টাকা থাকত। কিন্তু পাওনাদাররা কি আর সরকারি সময়ের অপেক্ষা করবে? তাই তো বাজারে দাম কম হলেও বিক্রি করে দিচ্ছি।

কচুয়া বাজারের ধান ব্যবসায়ী মো. রিয়াজ বিশ্বাস বলেন, প্রতি হাটে এ বাজারে হাজার মণের ওপরে ধান বিক্রি হয়। শুধু কচুয়া নয়, বাধাল, দেপাড়া, গজালিয়া, দৈবজ্ঞহাটি, সিঅ্যান্ডবি বাজারসহ জেলার সব বড় বড় বাজারে ভরা মৌসুমে এভাবেই ধান বিক্রি হবে। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ কৃষকের ধান বিক্রি হয়ে যাবে। তখন দামও কিছুটা বাড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, সরকার কৃষকদের সুবিধার জন্য ধান কিনছে। কিন্তু কই কৃষকরা তো সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। কৃষকদের ধান নেওয়া শেষ হয়ে গেলে ব্যবসায়ীদের মজুদ করা ধান ১২০০ টাকা দরে নেবে। তখন আর তেমন কোনো নিয়ম কানুনও থাকবে না।

বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রধান সহকারী গোলাম রাব্বানি বলেন, ৪ মে আমাদের কাছে একটি চিঠি এসেছে। তবে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।  

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা ধান চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, যতদ্রুত সম্ভব কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।