সাতক্ষীরা: অনেকেই এখন বাড়ির আঙিনায় কিংবা ছাদে বাগান করছেন। কেউ সৌন্দর্য বৃদ্ধি, কেউ ফলের জন্য, কেউ বা সবজির চাহিদা মেটাতে বাগান করছেন।
বাগানটি সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ফুল-ফল-সবজির যোগানেও অনন্য। তবে, গৃহকর্তা গাজী আলী আশরাফের উঠান বাগানটি কোনো সাধারণ বাগান নয়, এটি যেন এক খণ্ড গবেষণাগার।
গাজী আলী আশরাফ পেশাগত জীবনে কখনো শিক্ষকতা করেছেন, কখনো ছিলেন স্টুডিও ব্যবসায়ী। তবে, গাছের প্রতি তার সব সময়ই আলাদা টান ছিল। এজন্য জীবনে যেমন প্রচুর গাছ সংগ্রহ করেছেন, তেমনি তা দিয়ে প্রতিনিয়তই করে চলেছেন ‘এক্সপেরিমেন্ট’।
তার এক্সপেরিমেন্টে (পরীক্ষা) যেমন সাধারণ বেগুন গাছ স্থান পেয়েছে, তেমনি স্থান পেয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক করসল বা টক আতাও।
৭৬ বছর বয়সেও থেমে নেই গাজী আলী আশরাফ। নিজ বাড়ির বাগানটিই তার সঙ্গী। বাগান পরিচর্যা আর এক্সপেরিমেন্ট করেই সময় কাটে তার।
গাজী আলী আশরাফের বাগানে রয়েছে কালমেঘা, অ্যালোভেরা, পুদিনা, কারিপাতা, তুলসী, আকন্দ, বাসক, পিপুল, করসল, সোলা কচুসহ নানা প্রজাতির ওষুধি গাছ।
একই ভাবে বাগান সেজেছে বেলি, দোলনচাঁপা, এডিনিয়াস, বোতাম ফুল, গ্রাউন্ড অর্কিড, গোলাপসহ নানা প্রজাতির ফুলে।
রয়েছে দেশবিদেশের নানা প্রজাতির ফলও। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জামরুল, কালোজাম, কামরাঙা, তিন জাতের লিচু, অন্তত ১২ জাতের আম, সৌদি আরবের আজোয়া খেজুর, তাল, তিন জাতের কাঁঠাল, পেয়ারা, ছয় জাতের লেবু, কদবেল, পেঁপে, কলা, নাশপতি, আপেল, আমড়া, সফেদা, আঙুর, ড্রাগন ও ফিলিপাইনের ব্লাক সুগারকেনসহ নানা জাতের ফল।
দারুচিনি, তেজপাতা, আদাসহ কয়েক প্রকার মসলাও রয়েছে তার বাগানে। সেই সঙ্গে বেগুন, পুঁইশাক, ওল, লাউসহ নানা প্রজাতির মৌসুমি সবজি তো আছেই।
রয়েছে মৌ-বাক্স, পুকুরে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ।
তিনি যেমন বিভিন্ন জাতের গাছ সংগ্রহ করে লাগাতে পছন্দ করেন, তেমনি কাটতেও দ্বিধা করেন না। গাছ নিয়ে এক্সপেরিমেন্টই তার প্রধান লক্ষ্য।
তাই তো তিনি যেমন এক গাছেই লতা, গোবিন্দভোগ ও কাঁচামিঠা আম ফলিয়ে সফল হয়েছেন, তেমনি এবার চেষ্টা করছেন এক গাছে সাত প্রকার আম ফলানোর।
বাগানের একটি গাছ থেকে তিনি আড়াই বছর ধরে বেগুন সংগ্রহ করছেন। এখন অপেক্ষা করছেন আরও কতদিন গাছটি থেকে বেগুন পাওয়া যায়- সেটা দেখার।
তার বাগানের একটি গোলাপ গাছের বয়স ১২ বছর, যা লম্বায় ১২ ফুট ছাড়িয়েছে এবং এখনো গাছটির ফুলে যেমন সৌন্দর্য বাড়ছে, তেমনি সুবাস মন কাড়ছে সবার।
গাজী আলী আশরাফ নিজ বাড়ির উঠানেই মৌ-বাক্স বসিয়েছেন দীর্ঘ ৪১ বছর আগে এবং তা থেকেই মেটে তার পরিবারের মধুর চাহিদা। একই সঙ্গে পরাগায়নেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে এসব মৌমাছি।
তালের বীজ বপন করে ৪১ বছর পর তা থেকে ফল পেয়েছেন তিনি।
২০১২ সালে থাইল্যান্ড থেকে বীজ সংগ্রহ করে লাগিয়েছেন ক্যান্সার প্রতিরোধক করসল বা টক আতা গাছ এবং নিজে ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে করসলের পাতার রস খেয়ে নিজেই এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন।
একই সঙ্গে লাগিয়েছেন দেশি আখ ও ফিলিপাইনের ব্লাক সুগারকেন। তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন, উভয় জাতের পার্থক্য, বৃদ্ধি ও অন্যান্য গুণাগুণ।
এভাবেই প্রতিটি গাছ নিয়ে তার পরীক্ষা নিরীক্ষার যেন শেষ নেই।
গাছ নিয়ে কেন এতো এক্সপেরিমেন্ট- এমন প্রশ্নে গাজী আলী আশরাফ বলেন, আমরা অনেক কিছুই মৌখিকভাবে শুনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। অনেক কিছু মন্তব্য করি। কিন্তু আমি এটা পছন্দ করি না। আমি সেটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখতে চাই- এটার আউটপুট কী, একটা থেকে কত দিন ফল পাওয়া যাবে, আমি নিজে সেটা জানতে চাই এবং সমাজের মানুষকে জানাতে চাই- এটাই মূলত আমার গবেষণা বল, এক্সপেরিমেন্ট বল- তার মূল উদ্দেশ্য।
তিনি আরও বলেন, বাড়ির জমি পতিত না রেখে সেখানে ওষুধি গাছ, কিছু সবজি, কয়েকটি ফল গাছের চারা, কিছু ফুল লাগাতে পারলে তো আর কিছু দরকার হয় না। পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদাও মেটে, উদ্বৃত্ত ফল-ফলাদি বিক্রিও করা যায়। অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না।
তিনি বলেন, যদিও আমার বাগানটি সম্পূর্ণ অবাণিজ্যিক, তারপরও মানুষ আসতেই থাকে। কখনো করসলের পাতা নিতে, কখনো তুলসির পাতা, কখনো কদবেল- যখন যার যা লাগে চলে আসে। মানুষকে দিয়ে তৃপ্তি পাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
এসআই