ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ছাগলনাইয়ায় বাড়ছে মহিষের চাহিদা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
ছাগলনাইয়ায় বাড়ছে মহিষের চাহিদা

ফেনী: ফেনীর ছাগলনাইয়ায় কোরবানির বিকিকিনিতে বাড়ছে মহিষের চাহিদা। গরুর মাংস থেকে নিরাপদ হওয়ায় স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় অনেকেই কোরবানিতে বেচে নিচ্ছেন মহিষকে।

হাট ও খামারগুলোতেও বেড়েছে মহিষের বিক্রি।  

তুলনামূলক দাম ও স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকায় এবার কোরবানিতে মহিষের মাংসের চাহিদা বাড়লেও বছর কয়েক আগেও গরুর সঙ্গে মহিষের মাংস মিলিয়ে দিতো অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাতে লাভ হতো বেশি। কারণ তখন মহিষের মাংসের দাম ছিল কম। তবে বর্তমানে কোরবানিতে বিক্রি বেড়েছে মহিষের। তাই জেলায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠছে মহিষের খামার।

ফেনীর সোনাগাজীর চরাঞ্চলে লালিত-পালিত এসব মহিষ চলে যাচ্ছে বিভিন্ন হাট ও খামারে। গরুর মাংস থেকে নিরাপদ ও কম দামের হওয়ায় মানুষ মহিষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের আঞ্চলিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান গবেষক ডা.সুব্রত সরকার বলছেন মহিষের মাংস গরুর মাংস থেকে নিরাপদ। মহিষের মাংসে কোলেস্টেরল কম থাকে, আামিষ বেশি থাকে। মিনারেলও বেশি থাকে। এসব বিবেচনায় মহিষের মাংস ভালো।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানায় এবারের কোরবানি মৌসুমে ফেনীতে ৮০ হাজার ৮০০ পশুর চাহিদা রয়েছে। ছাগলনাইয়ায় মোট কোরবানির ২০ শতাংশ মহিষ কোরবানি হওয়ার কথা রয়েছে।  

ছাগলনাইয়ার জাহান এগ্রো ফার্মে সরেজমিনে দেখা যায়, খামারের ভেতরে লালিত পালিত হচ্ছে শতাধিক মহিষ।

বিশাল জায়গাজুড়ে চারটি আলাদা শেডে বিক্রির উপযোগী মহিষগুলো রাখা। এর মধ্যে ভারতের গুজরাটের জাফরাবাদী জাতের বিশাল দুটি মহিষ সহজেই নজর কাড়ে। একেকটির ওজন প্রায় ১ হাজার ১০০ কেজি। এর একটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

জাহান অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানায়, খামারেই ওয়েট স্কেল বসানো আছে। ক্রেতাদের সামনেই ওজন করে পশু বেচাকেনা হয়। সাধারণত ৩০০ থেকে ৬০০ কেজির মহিষ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৪৮০ টাকায়। এর চেয়ে বড় আকারের মহিষগুলো দামাদামি করেই কিনে থাকেন ক্রেতারা। অনলাইনেও গরু বা মহিষ কেনার সুযোগ রয়েছে।  

মহিষের খামার গড়তে কেন আগ্রহী হলেন এমন প্রশ্নে খামার মালিক বাদল চৌধুরী বলেন, গরুর চেয়ে মহিষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। মহিষের মাংস গরুর চেয়ে নিরাপদ বলে এর ভোক্তাও বাড়ছে। এ ছাড়া মহিষ পালনে খরচের তুলনায় বিক্রিতে লাভ থাকে বেশি। তাই আমিও মহিষ পালন শুরু করেছি।  

তার মতে, ভারত থেকে মহিষের যে প্রক্রিয়াজাত মাংস আসছে, সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এখন দেশেই মহিষের বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠছে। ফলে এসব মাংস আমদানি বন্ধ করলে দেশ ও দেশের খামারিরা উপকৃত হবে।

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জাহান অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডে বিক্রির জন্য প্রস্তুত ৩০০টি মহিষ।  

ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান,  গুণগত মানের দিক দিয়ে গরুর মাংসের তুলনায় মহিষের মাংস কিছুটা শক্ত, তবে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। উভয় মাংসের স্বাদ প্রায় একই রকম হলেও মহিষের মাংসে প্রোটিন তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। মহিষের মাংসে ২ শতাংশের কম কোলেস্টেরল থাকে অথচ গরুর মাংসে ৪ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে গরুর তুলনায় মহিষের মাংস কম লাল হলেও মহিষের মাংসে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সচেতনরা মহিষ পছন্দ করছেন। মহিষের দুধে উপকারি মিল্ক ফ্যাটও থাকে গরুর প্রায় দ্বিগুণ। অল্প খরচের হাউজিং ম্যাটেরিয়ালে মহিষ পালন করা সম্ভব। তাই খামারগুলোতে মহিষ পালন বাড়ছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা যায় মানুষ আগ্রহের সঙ্গে মহিষ কিনছে।  

ছাগলনাইয়া বাজারে গিয়ে কথা হয় ফায়জুল ইসলাম নামের এক জনের সঙ্গে। তিনি এক লাখ ৪৩ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি মহিষ। তিনি জানান, পরিবারের সবার এলার্জির সমস্যা রয়েছে। স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে নিরাপদ থাকায় মহিষ কোরবানি করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এসএইচডি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।