ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

‘৪০ লাখে’র নোয়াখালী কিং অবশেষে ৪ লাখে বিক্রি 

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২৩
‘৪০ লাখে’র নোয়াখালী কিং অবশেষে ৪ লাখে বিক্রি 

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মোহাম্মদ উল্যা নামে এক ব্যক্তির খামারে বেড়ে ওঠা ‘নোয়াখালী কিং’ নামের বিশালদেহী ষাঁড়টি মাত্র চার লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঢাকার গাবতলীর গরুর হাটে ঈদের আগের দিন ষাঁড়টি বিক্রি করেন তিনি।

 

খামারি মোহাম্মদ উল্যা দাবি করেছেন, তার ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৫৭ মণ। প্রথমে এটির দাম হাঁকিয়েছিলেন ৪০ লাখ টাকা। পরে গাবতলীর হাটে সেটির দাম হাঁকানো হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। পর্যায়ক্রমে ২০ লাখ, পরে ১৭ লাখ টাকা দাম চাওয়া হয়। তবে গাবতলীর বাজারে আশানুরূপ ক্রেতা পাননি তিনি। উল্টো গরু বিক্রি করতে গিয়ে তার মোটা দাগে ব্যয় হয়েছে। ফলে মনের কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে। সেই কষ্টে গরুর খামার বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন প্রান্তিক এ খামারি।  

রোববার (২ জুলাই) সকালে মোহাম্মদ উল্যা বাংলানিউজকে বলেন, গরু পালতে গিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। সাড়ে তিন বছর গরুটি লালন পালন করতে গিয়ে অনেক দেনা হয়েছি। ভেবেছিলাম গরুর ভালো দাম পাব। বিক্রি করে দেনা শোধ করব। কিন্তু এত বড় গরু বিক্রি হয়েছে মাত্র তিন লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। বাধ্য হয়ে এতো কম দামে বলতে গেলে পানির দরে বিক্রি করতে হয়েছে। মাথার ওপর দেনার দায় ছিল। এক সপ্তাহ গাবতলীর হাটে ছিলাম। হাটের ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে। বাড়িতে তিন লাখ টাকা নিয়ে আসতে পেরেছি।  

তিনি বলেন, গরুটি বিক্রি না করে উপায় ছিল না। প্রতিদিন গরুটির পেছনে দেড় হাজার টাকার মতো খরচ আছে। বাড়িতে নিয়ে এসে আবার এ খরচ বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যে হারে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে, তাতে গরু লালন পালন করে খামারিদের এখন আর পোষাবে না। খামারে উন্নত জাতের দুধের গরু আছে। এক লিটার দুধের দাম পাই ৪৫ টাকা, কিন্তু এক কেজি ভুসির দাম ৫৫ টাকা। তাই খামার বন্ধ করে দেব।  

রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্টিলব্রিজ সংলগ্ন হোনার বাড়ির অজি উল্যার ছেলে মোহাম্মদ উল্যার বিসমিল্লাহ ডেইরি ফার্মে পুরোপুরি প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বড় হয়েছে নোয়াখালী কিং নামের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি।  

সাড়ে তিন বছরে ষাঁড়টির ওজন হয়েছে প্রায় ৫৭ মণ। উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. মোফাজ্জল হোসেন পরিমাপ করে ষাঁড়টির ওজন নির্ধারণ করে দেন।

ষাঁড়ের মালিক মোহাম্মদ উল্যা ঈদের আগে বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, তিনি প্রায় ছয় বছর আগে বিসমিল্লাহ ডেইরি ফার্ম নামে একটি গরুর খামার গড়ে তোলেন। মূলত দুধের গরু পুষে দুধ বিক্রি করেন তিনি। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে দুই লাখ ৫৩ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি দুধের গরু কেনেন। তখন গরুর সঙ্গে থাকা বাছুরটির বয়স মাত্র চারদিন ছিল। বাছুরটি তিনি লালন পালন করে বড় করেন। বিশালাকৃতির হওয়য় এটির নাম দিয়েছেন ‘নোয়াখালী কিং’।  

তিনি জানিয়েছেন, অনেক খামারি কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করেন। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে গরুটি পুষেছেন করেন। এটির খাবার ছিল ভুসি, খৈল, খড়, ভাতের মাড় এবং কাঁচা ঘাস।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।