ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বৃষ্টি নেই, পাট পচাতে বিপাকে নীলফামারীর কৃষক

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
বৃষ্টি নেই, পাট পচাতে বিপাকে নীলফামারীর কৃষক

নীলফামারী: চলছে বর্ষাকাল, তবুও নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত। এ কারণে পাট জাগ দিতে পারছেন না নীলফামারী জেলার কৃষকরা।

এ অবস্থায়  পাট কেটে জমিতে কেউবা বিল-জলাশয়ের কাছে রেখে দিচ্ছেন। যাতে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি হলে পাট জাগ দিতে পারেন।  

এদিকে অন্য পদ্ধতিতে পাট জাগ দিতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

নীলফামারী জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সদর ও সৈয়দপুরে পাটের ফলন ভালো হলেও পানির অভাবে অনেকে ক্ষেতেই পাট ফেলে রেখেছেন। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় ডোবায় পানি নেই। তাই পাট জাগ দিতে পারেননি অনেক কৃষক। মাঠে ফেলে রাখা পাটের আঁশও শুকিয়ে যাচ্ছে। পাট জাগ দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

কৃষি অফিস বলছে, পাট পচানোর পানির অভাবে এবার চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। চাষিদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ১০ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয়। এ পদ্ধতিতে পাট পচালে পাটের আঁশের মান ভালো থাকে। তবে পাটকাঠি নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টি না হওয়ায় হতাশ পাট চাষিরা। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে খাল, বিল, নদী, নালা পানিতে ভরপুর থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়ার মতো পানি নেই খাল-বিলে।

বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, চাষিরা পাট কেটে জমির পাশে বা রাস্তার ধারে, খাল-বিল বা জলাশয়ের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ আবার অল্প পানিতেই পাটের ওপর মাটি চাপা দিয়ে পাট জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শত শত কৃষক পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না। এ কারণে অনেকের পাট ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ পুকুর, খাল কিংবা ৫-৭ কিলোমিটার দূরে ভ্যান ও রিকশায় করে নদীতে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে পাট চাষিদের।  

এদিকে আবার বৃষ্টির অভাবে আমনের আবাদ শুরু করতে পারছেন না কৃষক। কেউ কেউ বর্ষাকালের খরায় সেচযন্ত্র চালিয়ে আমন চারা লাগাচ্ছেন।  

কৃষকরা জানায়, প্রতিবছর পানি সংকটে পাট জাগ দেওয়া সমস্যা ও দাম না পাওয়ার কারণে কৃষকরা পাটের আবাদ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন। শুধুমাত্র জ্বালানির জন্য এই পাট আবাদ করছেন।  

এছাড়া এই জনপদের পাট মানে ভালো না হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে চাহিদাও কম থাকে। তবে পাটখড়ির চাহিদা সবসময় থাকে। নিজে ব্যবহার করে বাকিটা বিক্রি করে পাটখড়িতে লাভ আসে সারা বছর।

জেলার সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ির কৃষক শাহজাহান আলী জানান, তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। ক্ষেত থেকে পাটগাছ কেটে দূরে কোথাও নিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এর ফলে অতিরিক্ত শ্রমিক খরচ লাগছে। উপায় নেই আমন আবাদের জন্য জমি খালি করতে হচ্ছে।  

পাট চাষি রহিদুল ইসলাম বলেন, ভরা বর্ষায় বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতেই পাট নষ্ট হচ্ছে। পাটগাছের পাতা, কাণ্ড ও গোড়া মরতে শুরু করেছে। পাট কাটার সময় হলেও জাগ দেওয়ার সমস্যায় পাট কাটতে পারছি না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বক্কর সাইফুল ইসলাম বলেন, চাষিরা পাট কেটে জাগ দিতে শুরু করেছেন। কোথাও কোথাও পাট পচানোর পানির অভাবে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। আমরা চাষিদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এই পদ্ধতিতে ১০ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয়। এ পদ্ধতিতে পাট পচালে পাটের আঁশের মান ভালো থাকে। এ পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ালে অনাবৃষ্টি হলেও পাটের উৎপাদন ব্যাহত হবে না। পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে পাট অন্যতম হওয়ায় সেটাকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃষকদের আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়াসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।