পঞ্চগড়: উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় সুগার মিল (চিনিকল)। এ মিলকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ে আখের চাষ কয়েকগুণ বেড়ে গেলেও গত তিন বছরে চাষের হার অনেকটাই কমে এসেছে।
পঞ্চগড় চিনিকলের আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চিনিকলের পুরো এলাকা জুড়ে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে আখ মাড়াই ও পরিবহনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, বাহন।
ষাটের দশকে পঞ্চগড়ের ধাক্কামারা এলাকায় এ চিনিকল প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে জেলাবাসী। তবে নানা কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালে দেশের ছয়টি কারখানার সঙ্গে পঞ্চগড়েও আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করে সরকার। এতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে জেলা জুড়ে।
পঞ্চগড় চিনিকল ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। তবে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ রাখায় আখ পরিবহনের কিছু ট্রাক্টর ও যন্ত্রাংশ সরিয়ে অন্য চিনিকলে নেওয়া হলেও চরম দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন শ্রমিক ও আখ চাষিরা। দ্রুত এ চিনিকল আবার চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সচেতন মহলসহ স্থানীয়রা বলছে, দীর্ঘদিন ধরে এ চিনিকলে আখ মাড়াই না হওয়ায় দিনের পর দিন নষ্ট হচ্ছে কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
স্থানীয় হাবিবুর রহমান ও আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চিনিকলটি যখন চালু ছিল, তখন অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছিল। এর মধ্যে হঠাৎ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েন তারা। এ মিলে দীর্ঘদিন কাজ করেছি আমরা। কিন্তু এখন এখানে কোনো কাজ হয় না।
সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য, পঞ্চগড় চিনিকল চালু থাকা অবস্থায় চিনির বাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। এছাড়া এটি পঞ্চগড়ের অর্থনীতিতে অনেকটাই ভূমিকা রেখেছিল।
পঞ্চগড় চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, চিনিকলটি পঞ্চগড়ে একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটিকে কেন্দ্র করে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। আর এ চিনিকলের চিনি দিয়ে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হতো। কারণ যখনই চিনির বাজার একটু গরম হতো, বাজার স্বাভাবিক করতে এ চিনি অনেক ভূমিকা পালন করত।
সম্প্রতি পঞ্চগড় চিনিকল কারখানা পরিদর্শনে এসে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, শ্রমিকসহ সবার সঙ্গে কথা বলে বন্ধ এসব কারখানায় নতুন করে চিনির পাশাপাশি বাইপ্রোডাক্ট তৈরি করে চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
পঞ্চগড় চিনিকলের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কারখানাগুলো বন্ধ থাকার পাশাপাশি বর্তমানে নয়টি চিনিকলে চিনি মজুদ না থাকায় চিনির দাম ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়াচ্ছে।
জানা যায়, পঞ্চগড় চিনিকলটি প্রায় ২১ দশমিক ২৮ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে। ২০০৫-৬ অর্থবছরে নানা কারণে লোকসান গুণতে শুরু করে কারখানাটি। ২০২০ সালে এসে লোকসানে পড়ে দেশের ছয়টি কারখানার সঙ্গে পঞ্চগড় চিনিকলেরও আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করে সরকার।
এদিকে ৬ কোটি ৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে পঞ্চগড় চিনিকলে ২০১৮ সালে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণ শুরু হলে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ ইটিপির নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেড।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
এসআই