ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

২৬শ’ ফুট জমিতে সাম্মাম চাষে চমক! 

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
২৬শ’ ফুট জমিতে সাম্মাম চাষে চমক! 

পাথরঘাটা (বরগুনা): বাবা কৃষি কাজ করেন। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে সহযোগিতা করেছেন, পাশে থেকে কৃষি কাজ শিখেছেন।

লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার কাজে সহযোগিতা করে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছেন।  

ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ে শতভাগ পাস করিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এতো ব্যস্ততার মধ্যেও কৃষি কাজ করে চমক দেখালেন তিনি।

বলছি তরিকুল ইসলামের কথা। উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার চরদুয়ানী ইউনিয়নের ছোট টেংরা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। পাথরঘাটা প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তাসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমির ইংরেজির সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকতা পেশায় থেকেও নিয়তিত কৃষি কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। অসময়ে সাম্মাম আর তরমুজ চাষ করে চমক দেখিয়েছেন।

তরিকুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে কাজ করতে করতে কাজ শিখেছি। বাবা কৃষি কাজ করে আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন। একে তো আমাদের এলাকা কৃষি নির্ভর, তার ওপর কৃষি পরিবার, সে কারণেই কৃষিতে মন প্রাণ দিয়ে কাজ করছি। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের কাজ শেষ করে বাড়িতে এসে কৃষি কাজ করি। আমার কাজে বাবাও সহযোগিতা করেন।  

সাম্মাম চাষের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে আমি ধান, তরমুজ ও বিভিন্ন রবিশস্য চাষ করতাম। পরে অনলাইনে সাম্মাম চাষ দেখে রংপুর থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে চার বছর আগে অল্প জায়গায় চাষ করেছি। প্রথম বছরেই ভালো চাষ হয়। প্রথম চাষ করার পর অনেকেই বলেছিলেন, সাম্মাম এ এলাকায় ভালো হবে না। আমি টার্গেট নিয়ে আবার চাষ করেছি। পরের বছর থেকে অসময়ই সাম্মাম চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি। এখন মাছের ঘেরের চারপাশে পরিত্যক্ত ২৬ ফুট জমিতে ৫০০ বীজ রোপণ করেছি। অসময়েও ভালো ফলন হয়। মূলত সাম্মাম চাষ হয় মরুভূমিতে। তবে আমি চাষ করছি অসময়ে। সাম্মাম চাষের মৌসুম হলো ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। আর আমি চাষ করেছি মে থেকে জুলাইয়ে। এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করেছি। অল্প জমিতে সাম্মাম চাষ করা যায়, খরচ কম হয়, তবে বেশি যত্ন নিতে হয়।

সাম্মাম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। একেকটির ওজন আধা কেজি থেকে দুই কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। তরমুজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, একেকটির ওজন আধা কেজি থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। এ ফল খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছি। এ বছর সাম্মাম থেকেই আয়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ টাকা। তরমুজ ও সাম্মাম মিলিয়ে প্রতি বছর পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয় হয়।  

তিনি বলেন, শিক্ষিত বেকাররা যাতে এ পেশায় আসেন এবং কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য শিক্ষিতদের এ পেশায় আসা উচিত।

সাম্মাম সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের ফল। এরই মধ্যে সাম্মাম এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তার জমিতে দুই জাতের সাম্মাম রয়েছে। এর মধ্যে এক জাতের সাম্মামের বাইরের অংশ দেখতে ক্ষীরার মতো খসখসে আর ভেতরে পেঁপের রং। আরেক জাত হচ্ছে বাইরে সবুজ ভেতরে সাদা। তবে দুটি ফলই খেতে মিষ্টি, রসালো ও সুস্বাদু। সাম্মাম ফলের ভেতরটা দেখতে ও খেতে বাঙ্গির মতো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত হোসেন বলেন, সাম্মাম মরুভূমি ও পাহাড়ের ফল। উপকূলীয় অঞ্চলে এটি নতুন। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা বুঝতে পারছি, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততায়ও চাষ করা যায় এবং ভালো ফলনও হয়।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এ অঞ্চলে এ ফল নতুন, তাই এ ফলের স্বাদ বা উপকারিতা এবং বাজারজাত নিয়ে প্রচার প্রচারণা দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।