ঢাকা, শুক্রবার, ৫ পৌষ ১৪৩১, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

মেহেরপুরে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ, দিশেহারা কৃষক

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
মেহেরপুরে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ, দিশেহারা কৃষক

মেহেরপুর: দীর্ঘ অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড রোদে মেহেরপুর জেলায় রোপা আমন ধানের ক্ষেতে ব্যাপকভাবে বেড়েছে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ। ফলে কয়েকদিন পরপর বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকা দমনে ব্যর্থ হয়ে দিশেহারা চাষিরা।

পোকা দমন বা নিধনে কৃষি অফিসের কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না বলে কৃষকরা অভিযোগ করছেন। তবে, কৃষি বিভাগ বলছেন, অতিমাত্রায় রোদ ও অনাবৃষ্টির কারণে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেশি, পোকা নিধনে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চাষিদের।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের রোপা আমন ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। অনেকেই আবার পেতেছেন আলোক ফাঁদ। কিন্তু কিছুতেই প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষকরা।

গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, দেড় বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল ব্রী—ধান ৮৭ রোপণ করেছেন। ধানের গাছও ভাল হয়েছে। কিন্তু পোকার আক্রমণে ধান গাছের মূল কাণ্ড শুকিয়ে যাচ্ছে এবং পাতা খেয়ে ফেছে। স্থানীয় দোকান থেকে কীটনাশক কিনে ক্ষেতে স্প্রে করেছি কিন্তু কোনো উপকার হয়নি।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভিত্তিক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা মিলছে না মাঠে। বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির লোকজন এসে যতটুকু পরামর্শ দিচ্ছেন শুধুমাত্র সেভাবেই ধানের জমিতে পরিচর্যা করছি। পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই না পেলে ধানে ফলন কম হবে এবং লোকসান হবে আমন ধান আবাদে।  

গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের ভাটপাড়া, হিজলবাড়িয়া, ধর্মচাকী ও হিন্দাসহ কয়েকটি গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব জমির আমন ধানের গাছে ব্যাপকভাবে মাজরা ও লেদ পোকাসহ পাতা খাদক পোকা আক্রমণ করেছে। মাজরা পোকার আক্রমণের কারণে অধিকাংশ ধানগাছের পাতা মরে হলুদ রং ধারণ করেছে। কোনো কোনো জমির ধানগাছ প্রায় পাতাশূন্য হয়ে মরে যাচ্ছে।

সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, এ বছর তিনি প্রায় তিন বিঘা জমিতে সাদা স্বর্ণা জাতের আমন ধান চাষ করেছেন। আমারসহ গ্রামের অধিকাংশ কৃষকের জমিতে মাজরা পোকা ও পাতা খাদক লেদা পোকায় আক্রমণ করেছে। পোকা দমনের জন্য প্রায় সব কৃষক দানাদার, পাউডার ও তরলজাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করছেন কিন্তু কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পোকার আক্রমণ। মাজরার পাশাপাশি ধানগাছে ঘাসফড়িং পোকারও আক্রমণ দেখা যাচ্ছে।

কৃষক আব্দুর রশিদ ও মিলন হোসেন জানান, এর আগে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঝে মধ্যে আমাদের মাঝে দেখা গেলেও ইদানীং তাদের আর খোঁজ নেই। এ বছর গ্রামের মাঠে আমন ধানের গাছে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাজরা পোকার আক্রমণ হয়েছে। পোকা দমন করা না গেলে ধানের ফলনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন দাবি করেন, যেসব এলাকায় ধানখেতে মাজরা পোকার আক্রমণের কথা বলা হচ্ছে, সেই এলাকার কোনো কৃষক তাদের বিষয়টি জানাননি। ওই এলাকায় কৃষি অফিস থেকে দ্রুত অফিসার পাঠিয়ে মাজরা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রায় ২৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার ৫৪৬ মেট্রিক টন। জেলায় এবছর উচ্চ ফলনশীল ব্রি—ধান—৮৭, ব্রি—৭৫,ব্রি—৭২ ও বিনা—১৭ জাতের ধান চাষ করেছেন কৃষকরা।

মেহেরপুর জেলা কৃষি প্রধান জেলা হিসেবে চাহিদার দ্বিগুণ ধানের আবাদ হয়ে থাকে। উৎপাদিত ধান জেলার কৃষকরা তাদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অন্য আবাদের খরচের জোগান দেন।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, অন্যান্য জেলায় ভারি বৃষ্টি হলেও মেহেরপুর জেলায় তেমন বৃষ্টি হয়নি। এছাড়াও প্রচণ্ড রোদের কারণে জমিতে পানি থাকছে না। সেচ দিয়েই কৃষকদের আবাদ করতে হচ্ছে। এমন অনাবৃষ্টি আর তীব্র রোদের কারণে আমন ধানে মাজরা, লেদা ও ঘাস ফড়িংসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ বেড়েছে। কীটনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি আলোক ফাঁদ ও ফেরোমন ট্যাফ ব্যবহারের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। অনেকেই উপকার পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া খুব সকালে কীটনাশক স্প্রে করারও পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।