বাগেরহাট: নারকেল, সুপারি ও চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত জেলা বাগেরহাট। জেলায় এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে সুপারির দাম। যার কারণে লোকসানে পড়তে হচ্ছে ইজারা নেওয়া বাগান মালিকদের। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় গৃহস্থ কৃষকরাও পড়েছেন বিপাকে। ব্যবসায়ীদের দাবি শুকনো সুপারি আমদানি, হরতাল অবরোধ ও নিম্নমুখী অর্থনীতির কারণে খুচরো বাজারে সুপারির দাম কমেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলায় এবার ৩ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ২৬ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। দিনদিন সুপারির চাষ বাড়ছে দাবি সরকারি এই দপ্তরটির।
জেলায় উৎপাদিত এসব সুপারি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় বড় বাজারে বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা এই সুপারি কিনে পাঠান দেশের বিভিন্ন বড় শহরে। রপ্তানিও হয়ে থাকে সামান্য কিছু। অবশিষ্ট সুপারি পানিতে ভিজিয়ে এবং শুকিয়ে অফসিজনে চরা দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
যেসব বাজারে সব থেকে বেশি সুপারি বিক্রি হয়, তার মধ্যে কুচয়া উপজেলার বাধাল বাজার অন্যতম। বাধাল বাজারে হাটের দিনে কয়েক কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হয়। সপ্তাহে রোব ও বৃহস্পতিবার দু’দিন বসে এই হাট। ভোর ৬টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে ক্রয় বিক্রয়। এ হাটে সুপারি বিক্রি হয় কুড়িতে। এক কুড়ি সমান ২৩১টি সুপারি।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে বাধালবাজারের সুপারির হাটে দেখা যায়, বড় সুপারি প্রতি কুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫৫০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৭৫০- ৮৫০ টাকা। মাঝারি সুপারি কুড়ি ২৫০-৩৫০ টাকা, ছোট ও কাঁচা সুপারি আকার ভেদে ১৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের থেকে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত কম।
পুটিয়া থেকে সুপারি বিক্রি করতে আসা মোজাহের শেখ বলেন, এবার সুপারির দাম অনেক কম। তিন কুড়ি সুপারি নিয়ে আসছিলাম ১২০০ টাকা বিক্রি করেছি। আগের বছর হলে অন্তত ১৬০০ টাকা বিক্রি করতে পারতাম।
গোপালপুর গ্রামের মোহাম্মাদ আলী বলেন, প্রতিটি গাছের সুপারি পাড়াতে ১০ টাকা দিতে হয়। এর পরে ভ্যান ভাড়া-বাজারের খাজনা রয়েছে। এত দাম কম হলে আমাদের কী থাকে।
সীমা রাণী হালদার নামের এক গৃহবধূ বলেন, বছরের ছয় মাসের সংসার খরচ চলে সুপারি বিক্রির টাকায়। কিন্তু এবার দাম এত কম যে তিন মাসের খরচও উঠবে না।
সুপারি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, গেল বছরের যে সুপারির কুড়ি ৮০০ টাকা কিনেছি। এবার তার দাম ৪০০ টাকা। আর সর্বনিম্ন কিনছি ১৫০ টাকায়। যার কারণে সুপারির ফলন বেশি হলেও, কৃষকরা খুশি হতে পারছেন না।
সুপারির দাম কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ী সাগর মজুমদার বলেন, সুপারির ফলন যেমন বেশি, তেমনি বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ শুকনো সুপারি আমদানি করেছে কিছু ব্যবসায়ী। যার কারণে রংপুর, বগুরাসহ বিভিন্ন বড় মোকামে সুপারির কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া হরতাল ও অবরোধের কারণে ব্যবসায়ীরা ট্রাকে সুপারি পাঠাতে ভয় পান। যার প্রভাব পড়েছে দামের ওপর।
বাধাল ছাড়াও, কচুয়া, বৈলপুর, মাজারমোড়, কালিকাবাড়ী, দৈবজ্ঞহাটি, পোলেরহাট, সিঅ্যান্ডবি বাজারসহ বেশ কিছু হাটে সুপারি বিক্রি হয়। সুপারির ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে বাগেরহাটের পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ীসহ ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক জড়িত রয়েছেন। সুপারির নতুন বাজার সৃষ্টি হলে, সুপারি চাষি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, বাগেরহাট সুপারি প্রধান জেলা। এবার সুপারির ফলন অনেক ভালো হয়েছে। সুপারির ফল বাড়ানোর জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলনের সঙ্গে সঙ্গে যাতে কৃষকরা ভালো দাম পেতে পারেন, এজন্য নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জরুরি না হলে ও মৌসুমের সময় সুপারির আমদানি বন্ধ রাখলে কৃষকরা ভালো দাম পাবেন বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৩
এসআরএস