বগুড়া: বগুড়ায় চলতি মৌসুমে উপশী ও স্থানীয় মিলে ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে তুলনায় প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন বীজের প্রয়োজন।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আলু চাষের জন্য বেলে দোঁ-আশ বা দোঁ-আশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। বাজারে এখনও আলুর দাম বেশ চড়া। প্রতিবছর বগুড়ার ১২টি উপজেলায় কমবেশি আগাম আলু চাষে মাঠে নামেন চাষিরা। এ জেলার চাষিরা রোপা আমন ধান মাঠে থাকতেই অতিরিক্ত মুনাফার আশায় তাদের সবজি আবাদি জমিগুলো ফেলে না রেখে আগেভাগেই আলু চাষ শুরু করেন।
বগুড়া ফসলি মাঠ ফেলে রাখেন না চাষিরা। তারা মৌসুমি বিভিন্ন সবজি আবাদের পর একযোগে নেমে পড়েছেন আলু চাষে। কেননা আলুতে অতিরিক্ত মুনাফা পাওয়ায় চাষিদের আকৃষ্ট করে। জেলার শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম, শেরপুর সদরসহ প্রায় ১২টি উপজেলায় বিস্তীর্ণ মাঠের রোপা-আমন ধানগুলো কাটা মাড়াই শেষের পথে। এখন একযোগে তাদের বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠে বিভিন্ন জাতের আলু চাষে ব্যস্ত রয়েছেন এখানকার চাষিরা।
জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা তাদের ফসলি জমি প্রস্তুত করতে হাল দিচ্ছেন, আলগা মাটি সমান করতে দিচ্ছেন মই, অন্যদিকে আলু বীজ বপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কেউ কেউ। এদিকে অনেক এলাকায় জমি তৈরির কাজ শেষ করেছেন চাষিরা। অনেকেই জমিতে আলু লাগানোর কাজও শেষ করেছেন।
চাষিরা জানান, গত কয়েক বছর আগেও কিছু মুনাফালোভী ডিলারের যোগসাজশে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছিল। সেসময় নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে বীজ কিনতে হয়েছে চাষিদের। কিন্তু এ বছর চাষিদের বীজ পেতে কোনো সমস্যা না হওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছেন চাষিরা। তবে খাওতা আলুর পাশাপাশি এ বছর বীজের দাম তুলনামূলক বেশি বলেও জানান চাষিরা।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার চাষি খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, রোপা-আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষে এখন তার ১৮ বিঘা জমিতে একযোগে আলু চাষে জন্য জমি প্রস্তুতের কাজ সম্পন্ন করেছেন। এখন তার ১৫ বিঘাতে আলু চাষ সম্পন্ন হয়েছে। বিগত কয়েক বছর আগে বীজ ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। কিন্তু গত বছর ও চলতি বছরে এমন হয়রানিতে পড়তে হয়নি তাদের। তবে এবছর বীজের দাম তুলনামূলক বেশি।
তিনি জানান, বর্তমানে বাজার থেকে তারা লাল পাকরি আলুর বীজ কিনছেন প্রতিকেজি ৫২-৬০ টাকা দরে এবং কার্ডিনাল প্রতিকেজি ৩৯-৪৪ টাকা দরে। আগাম চাষাবাদে এ বীজগুলোতে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। তবুও সবমিলিয়ে আলুতে লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন তিনি।
শাজাহানপুর ও সদর উপজেলার আরিফুল ইসলাম, বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ উপজেলাগুলোর সিংহভাগ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। যেসব জমির ধান কাটা হয়েছে বা যেগুলোতে মৌসুমি বিভিন্ন সবজি লাগানো হয় এমন জমিগুলোতে আলু চাষে ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের। এ মৌসুমে আলুতে ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। এ জেলার অনেক চাষি অতিরিক্ত মুনাফা পাওয়ার লক্ষ্যে আগাম আলু চাষ করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আলু বীজের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি বলেও জানান তারা।
শিবগঞ্জ উপজেলার মনসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আগাম আলুতে ভালো দাম পাওয়া যায়। দাম বেশি থাকায় এবার তিনি ১৪ বিঘা জমিতে আলুর চাষ শুরু করেছেন। ফলন ভালো হলে অধিক মুনাফার মুখ দেখা যাবে। গত বছর তিনি সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তবে বীজের দাম বেশি থাকায় এবং শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় গতবারের চেয়ে এবার আলু চাষের খরচ বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বগুড়া জেলায় চলতি মৌসুমে উপশী ও স্থানীয় মিলে ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপশী ৪৭ হাজার ২৫০ ও স্থানীয় আট হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হবে। যার মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে (উপশী- ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন ও স্থানীয় এক লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন) ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন।
তিনি জানান, হেক্টর প্রতি জমিতে দেড় (১৫০০ কেজি) মেট্রিক টন বীজের প্রয়োজন। এ হিসেবে জেলায় প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু লাগানো সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (বীজ বিপণন) মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার জন্য চার হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আলুর বীজের মার্কেটিং চাহিদা পাঠানো হয়েছিল। যা দেশের মোট ২২টি হিমাগারের মধ্যে ১৬টি থেকে বীজের এ চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। চলতি বছরে জেলায় আলু বীজের কোনো সংকট নেই। চাষিদের অনেকেই নিজেরাই তাদের চাহিদা মোতাবেক বীজ বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখেন। বিএডিসির অধীনে বগুড়া অঞ্চলে ৩৮০ জন ও জয়পুরহাট অঞ্চলে ১২৫ জন ডিলার রয়েছে।
তিনি জানান, বিএডিসির ডায়মন্ড, গ্রানোলা, কারেজ, কার্ডিনাল, লেডিরোসেটা, ভুলুমিয়া ও রোজাগোল্ড জাতের এ ও বি গ্রেডের এবং এস্টারিক জাতের এ ও বি গ্রেডের প্রতি কেজি বীজ বর্তমানে ডিলার পর্যায়ে ৩৭ থেকে ৩৯ টাকা ও চাষি পর্যায়ে ৩৯ থেকে ৪১ টাকা বিক্রির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ডিলার পর্যায়ে ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ও চাষি পর্যায়ে ৫২ থেকে ৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২৩
কেইউএ/আরআইএস