মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে দুলছে সবুজ রোপা-আমন ধান। এই ধানগুলো এখনো পাকেনি।
প্রথম চাষ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক। এই ক্ষতি এখন দ্বিগুণ উৎসাহে কাটিয়ে উঠেছেন তারা। কৃষকের উদ্যোগে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেতেই আমন ধানের চাষ হয়েছে। দ্বিতীয় চাষে কৃষকের স্বপ্ন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে আমন।
কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, দেরিতে চাষে ফসলের উৎপাদন লাভজনক হয় কি না? এ ধরনের প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পর্যবেক্ষণে রেখেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তবে চলতি বছর বন্যার কারণে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রা।
জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, পানিতে কয়েকদিন তলিয়ে থাকার পরও আগাম জাতের বিনা-১৭ ও ৭, ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫সহ কিছু জাত টিকে থাকতে পারে।
মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার স্থানীয় কৃষক আমিন উল্লাহ বলেন, বন্যা আমাদের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। ক্ষেতে রোপণ করা হালিচারাগুলো নষ্ট করে ফেলেছে। এসব জমিতে সম্পূর্ণ নতুনভাবে হালিচারা কিনে রোপণ করা হয়েছে। এতে খরচও দ্বিগুণ হয়েছে। বন্যার আগে এক কিয়ার (৩০ শতক) জমিতে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বন্যার কারণে সেই জমিতে প্রায় আট হাজার টাকা খরচ পড়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যা–পরবর্তী সময়ে কৃষকের পক্ষে নতুনভাবে বীজতলা তৈরিসহ আবার রোপণ কঠিন হয়ে পড়ে। এরপরও অনেক কৃষক আমনের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেছেন। এতে কৃষকদের বাড়তি টাকা খরচ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকেরা দেরিতে চাষে কতটুকু ফসল হবেন, তা বিবেচনা করেননি। তবে কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে এবার আমন চাষ ব্যাহত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একদিকে বৃষ্টি ও অন্যদিকে বন্যার পানি জমাট বেঁধে কাউয়াদীঘি হাওর পারে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। মনু নদ সেচ প্রকল্পের আওতায় কাউয়াদীঘি হাওরের বাড়তি পানি নিষ্কাশন করার জন্য স্থাপিত পাম্প হাউসের মাধ্যমে সেচ দেওয়া হয়েছে। এতে পানি কিছুটা কমলেও আমন ফসলের মাঠ চাষের উপযোগী হয়ে ওঠেনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক কৃষিবিদ সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, এবারের বন্যায় জেলার ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আবার চারা রোপণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে আমনের চাষাবাদ না হওয়ায় প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষ হয়নি। এবার সারা জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার হেক্টর।
তিনি আরও বলেন, দেরিতে রোপণ করা ১৪ হাজার হেক্টর জমি আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা পুনরায় দ্বিগুণ ধৈর্য ও মনোবলের সঙ্গে বীজ ও চারা সংগ্রহ করে জমি চাষ করেছেন। এখন অপেক্ষার পালা। এই ফসল পাকতে আরও দুই-তিন সপ্তাহ সময় লাগবে।
সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২৪
বিবিবি/আরএ