ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

কচুর লতি চাষে ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৬
কচুর লতি চাষে ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জয়পুরহাট: দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার অন্তত ২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কচুর লতি। এ লতি শুধু এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্যেরই পরিবর্তন করেনি, তৈরি করেছে স্থানীয় ৫ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ।

 

কচুর লতি বর্তমানে এ অঞ্চলের অন্যতম রফতানি পণ্য হওয়ায় প্রায় সারাদিনই পাচবিবির বটতলী এলাকায় বাজারে থাকছে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। সেইসঙ্গে কচুর লতির বিকি-কিনি।

ফলে লতি চাষ ও পরিচর্যা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ, কেনা-বেচা ও গাড়িতে আনা-নেওয়াসহ নানা কাজে প্রতিদিনই ৫ শতাধিক মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত থাকছেন। এর মাধ্যমেই স্বল্প আয়ের এসব মানুষের সংসার ও ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ নির্বাহ হচ্ছে।

কচুর লতি চাষে একদিকে কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন, অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় এ সবজি চাষে ব্যাপক খুশি পাঁচবিবি উপজেলার কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষেরা।

তবে কচুর লতি চাষ ও বিক্রিসহ কোনো পর্যায়েই কৃষকরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না। এমনকি বটতলী বাজারও অস্থায়ী। তার ওপর ওই অস্থায়ী বাজারটি পাইকারদের হাতে জিম্মি থাকায় কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্যমূল্য থেকে।

জানা গেছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জয়পুরহাট জেলায় ২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে পানি কচুর লতির আবাদ হয়েছে। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১১০ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে শুধু পাঁচবিবি উপজেলায়ই ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে এই লতির আবাদ হয়েছে। এবার জেলায় লতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার মেট্রিক টন।

পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসুলপুর ইউনিয়নের মালিদহ গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শ্রমজীবী আবেদ হোসেন। তিনি ২০০৩ সাল থেকে পাঁচবিবির বটতলীতে কচুর লতির বাজারে কাজ করছেন। এর মাধ্যমে বেশ স্বাচ্ছন্দে চলছে তার পরিবার।

শুধু আবেদ হোসেনই নন, তার মতো উপজেলার আ. রহমান, শহিদুল, অনিল, রেজাউল, রনি, ছানোয়ার, রবিউল, আমান, আ. রাজ্জাকসহ শত শত মানুষ লতির বাজারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

অন্যদিকে, কচুর খেতেও কাজ করছেন অনেকে। তারা দিনমজুর হিসেবে কচু লাগানো, নিড়ানি, সেচ, কচু কেটে ভ্যানযোগে বাজারে নিয়ে আসা, ভ্যান থেকে নামানো, আঁটি বাঁধা, ট্রাকে লোড করাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে লতি চাষ ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

এ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা রবিউল ইসলাম নামে এক শ্রমিক জানান, ২ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। এ বাজারে কাজের সুবাদে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। পাশাপাশি ছেলেদের পড়াশোনাও চলছে ভালোভাবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আ. রাজ্জাক, আ. সোবহান, আবু তালেব, আমিনুল ইসলাম, বাবু, আতিয়ার রহমান, সুমন, আমীর হোসেনসহ অনেকেই জানান, এ লতির বাজার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।

পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, রফতানিযোগ্য কচুর লতি চাষে কৃষকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও তৃণমূল পর্যায়ে শ্রমজীবীরাও লাভবান হচ্ছেন। এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকে স্থায়ীকরণের লক্ষ্যে এখানে একটি আধুনিক মানের বাজার গড়ে তোলা হবে।

এখানে কচুর লতির জন্য রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ জোন করার একটি প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
এসআর/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।