ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বোরো ধানে ব্লাস্ট আক্রমণ

কৃষক বাঁচাতে বিশেষ প্রচারণা সরকারের

এস এম আববাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৬
কৃষক বাঁচাতে বিশেষ প্রচারণা সরকারের

ঢাকা: শীষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বোরো ধানে ব্লাস্ট আক্রমণ শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ রোগ দেখা দেয়।

তবে দেশের কৃষক বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বোরো ধানে ব্লাস্ট আক্রমণ ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি এলাকার মসজিদে মসজিদে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষক সচেতনতায় উঠান বৈঠক এবং আলোচনা করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ইসু করা মঙ্গলবারের (১২ এপ্রিল) চিঠিতে বলা হয়, কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বোরো ধানে ব্লাস্ট আক্রমণ দেখা দিয়েছে।

কৃষি অধিদফরের দেওয়া লিফলেট ও কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্লাস্ট হলো ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এটি ধানের অন্যতম প্রধান রোগ। চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় এ রোগ দেখা দিতে পারে।

ব্লাস্ট আক্রমণ
ব্লাস্ট রোগ প্রধানত লিফ ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট নামে পরিচিত। অনুকূল পরিবেশে রোগটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং ধানের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। রোগ প্রবণ জাতে রোগ সংক্রমণ হলে ৮০ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। ব্লাস্ট রোগ বীজের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও রোগাক্রান্ত গাছের জীবাণু বাতাস ও পোকামাকড়ের মাধ্যমে এক জমি থেকে অন্য জমিতে ছড়িয়ে পড়ে।

এ রোগটি ধানের পাতা, গিট, শীষের গোড়া বা শাখা-প্রশাখা এবং দানায় আক্রমণ করে। আক্রান্ত পাতায় প্রথমে হালকা ধূসর রংয়ের ভিজা দাগ দেখা যায়। আস্তে আস্তে তা বড় হয়ে মাঝখানটা ধূসর বা সাদা ও কিনারা বাদামী রং ধারণ করে। দাগগুলো একটু লম্বাটে হয় এবং দেখতে অনেকটা মানুষের চোখের মত। অনুকূল আবহাওয়ায় রোগটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং একাধিক দাগ মিশে গিয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত পুরো পাতা এমনকি পুরো গাছটিই মারা যেতে পারে।

গিট আক্রান্ত হলে আক্রান্ত স্থান কালো ও দুর্বল হয় এবং পানি ও খাদ্য না পেয়ে আক্রান্ত গিটের উপরের অংশ মারা যায়।

শীষের গোড়া আক্রান্ত হলে সেখানে বাদামী দাগ পড়ে এবং পচে যায়, একে বলে নেক ব্লাস্ট। ধান পুষ্ট হওয়ার আগে এ রোগের আক্রমণ হলে শীষের সব ধান চিটা হয়ে যেতে পারে।

যে কারণে ব্লাস্ট রোগ
রোগের অনুকূল পরিবেশ পেলে দ্রুত এ রোগ ছড়ায়। সাধারণত অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করলে, রোগাক্রান্ত বীজ ব্যবহার ও রোগপ্রবণ ধানের জাত চাষ করলে, জমিতে বা জমির আশপাশে অন্যান্য পোষক গাছ বা আগাছা থাকলে, দিনে প্রচণ্ড গরম ও রাতে ঠাণ্ডা অবস্থা বিরাজ করলে এ রোগ দেখা দেয়।

ব্লাস্ট দমন
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে বিঘা প্রতি (৩৩ শতকে) ৫ কেজি এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। নাটিভো, ফিলিয়া, পচামিন প্লাস, ট্রুপার, আমোক প্রপেল, জিল, সানফাইটার, কম্বিটু, দিফা, বেনলেট, ইমিন্যান্ট প্রো, টেনস্টার বা অন্যান্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশকের প্যাকেট বা বোতলের লেবেলে অনুমোদিত মাত্রায় সঠিকভাবে স্প্রে করতে হবে। রোগের প্রকোপ অনুযায়ী ৪ অথবা ৫ দিন পর দুই বার করে স্প্রে করতে হবে।

বাংলাদেশ সময় : ১২০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৬
এসএমএ/ জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।