ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

নতুন বিনা টমেটো ১১, ১২-তে হেক্টর প্রতি ১০০ টন

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
নতুন বিনা টমেটো ১১, ১২-তে হেক্টর প্রতি ১০০ টন ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বর্তমানে দেশে বিভিন্ন জাতের টমেটোর চেয়ে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ বেশি ফলন হবে। টমেটোর প্রধান রোগ ‘নেতিয়ে পড়া’ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।

সংরক্ষণও করা যাবে প্রচলিত টমেটোর চেয়ে বেশিদিন।
 
এছাড়া ভিটামিন সি-সহ নানা গুণাবলী রয়েছে এমন দু’টি জাতের টমেটো উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। দু’টি জাত হলো, বিনা টমেটো ১১ ও ১২। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে এ দু’টি জাত জাতীয় বীজ বোর্ড  নিবন্ধিত করেছে।
 
নতুন এ দুই জাতের টমেটো উদ্ভাবনের মূল কারিগরের দায়িত্বে ছিলেন বিনা’র ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ চার বছর গবেষণার পর এ দু’টি জাত উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছি। চলতি মাসের ১৩ তারিখে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ উইং জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পাওয়া যায়। এখন কৃষক পর্যায়ে এ দু’টি জাতের চাষাবাদ করা যাবে।
 
এ গবেষক জানান, প্রচলিত জাতের টমেটোর ফলন হেক্টর প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টন হয়ে থাকে। কিন্তু এ দু’টি নতুন জাতের টমেটোর ফলন হেক্টর প্রতি ৯০ থেকে ১০০ টন পর্যন্ত হবে। এ হিসাবে প্রচলিত টমেটোর চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ভাগ বেশি ফলন পাওয়া যাবে।
 
এছাড়া টমেটোর সবচেয়ে বড় রোগ হলো, নেতিয়ে পড়া। এ রোগ থেকেও চাষিরা রক্ষা পাবেন বিনা টমেটো ১১ ও ১২ চাষ করে। দু’টি জাতের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকলেও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও উৎপাদনে অনেকাংশে মিল রয়েছে।
 
গবেষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, দীর্ঘ চার বছর ধরে এ দুই জাতের টমেটো নিয়ে গবেষণা পরিচালনার পর জাতীয় বীজ বোর্ডে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়। এরপর বোর্ড যাচাই-বাছাই করে গত সপ্তাহে নিবন্ধনের অনুমতি দেয়।
 
জাপান ও ফিলিপাইন থেকে অনেকগুলো জামপ্লাজম সংগ্রহ করার পর সেগুলো নিয়ে দীর্ঘসময় সিলেকশন পদ্ধতিতে গবেষণা পরিচালনা করে এ দুই জাতের টমেটো উদ্ভাবনে সফলতা পাওয়া যায়। যা দেশের টমেটো চাষে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। দু’টি জাতই দেশের সব এলাকায় চাষ করা যাবে।
 
এছাড়া কৃষকের চারা তৈরিতেও কোনো সমস্যা হবে না। আগামী রবি মৌসুমে এ দুটি জাতের টমেটোর বীজ ব্যাপকভাবে সরবরাহ করার লক্ষ্যেও কাজ চলছে। বার মাস যেন জাত দুটি চাষ করা যায় সেটি নিয়েও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে প্রায় ২৫টি টমেটোর জাত অবমুক্ত হয়েছে।
 
যেভাবে বিনা টমেটো ১১ উদ্ভাবন ও গুণাবলী
২০১২ সালে জাপান থেকে বিভিন্ন টমেটোর জামপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়। এরপর প্রথমে বিনার প্রধান কার্যালয়ে ট্রায়াল দেওয়া হয়। এতে ভালো ফল পাওয়া গেলে কুমিল্লা, ঈশ্বরদী, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রায়াল দেন বিনার গবেষকরা।
 
এভাবে তিন বছর পরীক্ষা করে এর ফলন ও দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ার বিষয়টি দেখা হয়। এরপরই এটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
 
এ জাতের টমেটোর গাছ লম্বাকৃতির, কাণ্ড শক্ত, পাতা গাঢ় সবুজ ও চওড়া। পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ৯৫ থেকে ১শ সেন্টিমিটার। পাকা অবস্থায় সম্পূর্ণ লাল হয় ও ফলের উপরের অংশে বোঁটার দিকে কিনারায় সামান্য ঢেউ খেলানো থাকে।
 
আধুনিক উফশী টমেটোর সব বৈশিষ্ট্য থাকা এ জাতের টমেটো শীত মৌসুমে ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চারা রোপণ করলে জীবনকাল ৬০ থেকে ৬৫ দিন পাওয়া যাবে। এছাড়া শীতে রোপন করলেও পাওয়া যাবে ভালো ফলন। প্রচলিত জাতের চেয়ে ভিটামিন সি বেশি থাকা এই টমেটো ২৪ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
 
এ জাতের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নেতিয়ে পড়া (ফিউসারিয়াম উইলট) রোগ, লিফ কার্ল ও ফল ছিদ্রকারী পোকা সহনশীল।
 
যেভাবে বিনা টমেটো ১২ ও গুণাবলী
একই সময়ে বিনা টমেটো ১২’র জামপ্লাজম ফিলিপাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়। মাঠ পর্যায়েও বিনা টমেটো ১১’র মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সফলতা পাওয়ার পর জাতীয় বীজ বোর্ডে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হলে এর নিবন্ধনও মেলে।
 
এ টমেটোর গাছটি অনেক লম্বা আকৃতির। কাণ্ড শক্ত, গাছ খাড়া, পাতা গাঢ় সবুজ ও চওড়া। পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ১১০ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার। মাঝারি আকৃতির ফল হওয়া এ টমেটোর জীবনকাল ৭০ থেকে ৮০ দিন।
 
পাকা ফলের র১ হলুদাভ লাল ও ফল ডিম্বাকার হয়। সহজে পচে না, তিন সপ্তাহের বেশি সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
 
প্রচলিত টমেটোর চেয়ে এ টমেটোতে ভিটামিন সি’র উপস্থিতি অনেক বেশি। এতে ২৫ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি’র উপস্থিতি থাকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
একে/এসএনএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।