ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

লিচুর সঙ্গে পুড়ছে চাষিদের স্বপ্ন

মাসুক হৃদয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৬
লিচুর সঙ্গে পুড়ছে চাষিদের স্বপ্ন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ভারত সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া এবং বিজয়নগর উপজেলার মাটি ও জলবায়ু লিচু উৎপাদনের জন্য উপযোগী। কিন্তু এ বছর তীব্র তাপদাহের কারণে ওই দুই উপজেলার অন্তত শতাধিক বাগানের লিচু ও এর খোসা পুড়ে ফেটে যাচ্ছে।

সেই সঙ্গে পুড়তে যাচ্ছে লিচু চাষিদের স্বপ্নও!

মধু মাসের এ সময়টাতে ওই এলাকার লিচু চাষি, বাগানী ও ব্যবসায়ীরা খুশি হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো মাথায় হাত পড়েছে তাদের।
আখাউড়ার আজমপুর, চাঁন্দপুর এবং বিজয়নগরের বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, মিরাসানি, মুকন্দপুর, ভিটিদাউদপুর, অলিপুর ও কামালমোড়া গ্রামের একাধিক বাগান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সেখানকার লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে লিচু উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হবে। লিচু বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা পুঁজি উঠবে কি না, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

চাষিরা অভিযোগ করেন, এ এলাকার প্রত্যেকটি বাগানে এ অবস্থা চলতে থাকলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তা ন্যূনতম খোঁজখবর নিচ্ছেন না।

সোমবার সরেজমিন আজমপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় বাগান দেখভালের দায়িত্বে থাকা কুদ্দুছ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাগানের বোম্বাই ও চায়না থ্রি জাতের লিচু এখনও কাঁচা। আর পাটনাই জাতের লিচু আধা-পাকা। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক পরেই এ জাতের লিচু বিক্রি উপযোগী হতো। কিন্তু এ সময়ে লিচু ফেটে চির ধরেছে এবং খোসায় কালো দাগ পড়ে ফেটে যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিনই ঝরে পড়ছে লিচু।

বাগানের মালিক ক্যান্টন হোসাইন জানালেন, ৫৫টি গাছ নিয়ে তাদের এই বাগান। পার্শ্ববর্তী বিজয়নগর উপেজলার মিরাসানি গ্রামের আনজু মোল্লা তাদের কাছ থেকে বাগানটি এক মৌসুমের জন্য কিনে নিয়েছেন। কিন্তু এ বছর যে হারে লিচু ফেটে যাচ্ছে আর ঝরে পড়ছে এতে লাভের মুখ দেখা সম্ভব হবে না।

সরেজমিন ঘোরার সময় লিচু গাছ দেখিয়ে কুদ্দুছ মিয়া বলেন, কোনো কোনো থোকায় দু’শয়েরও বেশি লিচু ধরেছে। অথচ ১০টি লিচুও অক্ষত নেই।

কুদ্দুছ মিয়ার মাধ্যমে কথা হয় লিচু চাষি আনজু মোল্লার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, বিজয়নগর ও আখাউড়া উপজেলায় ৩১ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে মোট ২৫টি বাগান কিনেছেন। এসব বাগানে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি গাছ রয়েছে। কিন্তু এবার লিচু পুড়ে যাবার পাশাপাশি আকার ছোট হওয়াতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

আনজু মোল্লা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে বাগানে বাংলা গুটি সার, লাল সার, টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও জিপসাম দিচ্ছেন। একই সঙ্গে কীটনাশক ও পানি ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু এতে লিচু ফেটে যাওয়ার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, লিচুর ব্যাপারে পরামর্শ তো দূরের কথা, এখানকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার চেহারা পর্যন্ত আমি দেখিনি।

এ ব্যাপারে আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজমপুর গ্রামটি আনোয়ারপুর ব্লকে পড়েছে। ওই ব্লকের দায়িত্ব পালন করেন একজন নারী কর্মকর্তা (তানজিদা ইসলাম মজুমদার)। কিন্তু তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশকর আলী বাংলানিউজকে বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বাগানে বাগানে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়ার কথা। কিন্তু তাদের ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করাটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। তিনি জানান, এ বছর বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৬
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।