ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

দাম নিয়ে শঙ্কায় সোনালী ধানের চাষিরা

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৬
দাম নিয়ে শঙ্কায় সোনালী ধানের চাষিরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: মাঠ ভরা সোনালী ফসল। বৈশাখের তপ্ত হাওয়ার মধ্যেও সোনাঝরা ধানের শীষগুলো উঁকি দিচ্ছে বার বার।

রোদেলা বাতাসে ভাসছে গোছাভরা ধানের দোল খাওয়ার শন শন শব্দ।  

কিন্তু রক্ত ঘামানো সেই ফসল কাটতে গিয়ে সুখ নেই রাজশাহী অঞ্চলের কৃষাণ-কৃষাণির মনে। কারণ রাজশাহীর বাজারে এখন ধানের কাঙ্খিত দাম নেই। তবে ধান কেনার সরকারি ঘোষণার পর বাজারে ধানের দাম কিছুটা হলেও বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষকরা। সেই আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।
 
তাই দর-দামে বাজারের সব আশঙ্কা ছাপিয়ে চলছে আনন্দে মেতে ওঠার নিরন্তর চেষ্টা। গোটা মৌসুম কাজ করে খেতের সোনালী ধান নিয়েই এখন ব্যস্ত সময় কাটানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা।  

পাকা ধান কাটা, আঁটি বেঁধে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রতিটি কাজের খুঁটিনাটি নিয়ে ভোর থেকে সন্ধ্যা নামছে কৃষকের আঙ্গিনায়। এর সঙ্গে রয়েছে কৃষাণির নিরলস শ্রম। ধান কাটা শেষে ধান ছাড়ানো, শুকানো, ভাঙানোর কাজ শেষ করে এখন বাড়ির গোলায় ধান তোলার কাজ চলছে জোরেসোরে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, নিয়মিত বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেনি এবার। বেশি খরচে পানি কিনে সেচ দিতে হয়েছে কৃষকদের। এজন্য উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। কিছু খেতে ক্যারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও তেমন ক্ষতি হয়নি। এরপরও ফলন কমেছে।

এখন বোরো ধান কাটা চলছে, সঙ্গে মাড়াইয়ের কাজও। ইতোমধ্যে গ্রামের হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন ধান। জাতভেদে প্রতি মণ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়।

তিনি জানান, বোরো মৌসুমের ধান কাটা পুরোদমে শেষ হতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে মাঠে ধান কাটা অব্যাহত রয়েছে। এসব ধানের মধ্যে বিআর-২৮, মিটিকেট, পাইজাম উল্লেখযোগ্য।

রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত পবার চাষি রহিমুদ্দিন সরকার বলেন, রাজশাহী জেলায় বড়জোর আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই শতভাগ ধানকাটা মাড়াই শেষ হয়ে যাবে। এক দেড় মাসের মধ্যেই প্রান্তিক কৃষকের ধান বেচা-কেনা শেষ হবে। কারণ ঋণ শোধ করার তাগিদে চাষিরা বেশি দিন ধান ঘরে রাখতে পারেন না। কিন্তু এখন ধানের দাম তুলনামূলক কম। তবে এ মুহূর্তে সরকার সঠিক দাম নির্ধারণ করেছেন।  

তিনি বলেন, সরকার বোরো ধান-চালের ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেছেন। এবার প্রতিমণ ধানের দাম ৯২০ টাকা এবং চালের ১ হাজার ২৮০ টাকা। যা বাজার হিসেবে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রভাব ফেলবে।  

তবে এ ক্ষেত্রে তিনি সরাসরি প্রান্তিক কৃষদের কাছে থেকে দ্রুত ধান ক্রয়ের দাবি জানান। না হলে প্রকৃত কৃষকরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন না। আর কৃষক পর্যায়ে সরকারিভাবে ধান ক্রয় মে-জুনের মধ্যে শেষ না হলে তারা লাভের মুখ দেখবেন না। ফলে উদ্যোগটি ভেস্তে যাবে। যত দেরি হবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ততই সক্রিয় হবে। এতে কৃষকদের ধান চাষে আগ্রহ হারানোর শঙ্কার কথা বলেন তিনি।

এদিকে, সরকার বোরো ধান-চালের ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেছে। প্রতিমণ ধানের দাম ৯২০ টাকা এবং চালের দাম ১ হাজার ২৮০ টাকা দরে কিনবে। যা কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনে ভালো প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করছেন কৃষকরা। তবে প্রতি বছরই বিভিন্ন অজুহাতে কৃষকরা সরকারি দাম থেকে বঞ্চিত হন। বিভিন্ন কারণে এবারও কৃষকের ভাগ্যে এ দাম জুটবে কিনা তা নিয়ে সংশয় কাটছে না তাদের।  

পবার বাগসারা গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি চাল ৩২ এবং ধান ২৩ টাকা দরে কিনবে সরকার। সে হিসাবে ধানের মণ পড়বে ৯২০ টাকা আর চাল ১ হাজার ২৮০ টাকা। আগামী ৫ মে থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান।  

এবার ধান উৎপাদনে কেজি প্রতি ২০ টাকা ৭০ পয়সা ও চাল উৎপাদনে ২৯ টাকা খরচ হয়েছে। তাই সরকার নির্ধারিত দামে ধান-চাল বিক্রি করতে পারলে কৃষকরা লাভের মুখ দেখবে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা যায়, এবার রাজশাহীতে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা  নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৯ হাজার ৪১০ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ৬৬ হাজার ৪৯০ হেক্টর।  

ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর কম জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন হবে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ টন ধান। অথচ গত বছর বোরোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল।  

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বাংলানিউজকে জানান, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টি কম হওয়ায় কৃষকদের সেচের জন্য বেশি খরচ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে কৃষকদের অন্য ফসল চাষেও উৎসাহিত করা হয়েছে। এমন নানান কারণে ধানের চাষ কিছুটা কম হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৬
এসএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।