ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সাতক্ষীরায় পাটজাত পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
সাতক্ষীরায় পাটজাত পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাতক্ষীরা: নাজমা খাতুন। স্বামী ও দুইছেলেকে নিয়ে থাকেন সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা পশ্চিমপাড়ার খাস জমিতে।

ভ্যানচালক স্বামীর একার আয়ে সংসার আর দুইছেলের লেখাপড়ার খরচ চলে না।

ঠিক এমনই এক পরিস্থিতিতে পাটজাত পণ্য তৈরির কাজ শেখেন নাজমা। তৈরি করতে থাকেন পাটের ব্যাগ, পাপোষ, ওয়ালম্যাটসহ নানা পণ্য।

নাজমার মতো পৌরসভার বাগানবাড়ি এলাকার সাহেলা খাতুন, সাহাপাড়ার জাহানারা খাতুন, সুলতানপুর সরকারপাড়ার ফারজানা ইয়াসমিনরাও পাট দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। গুণে ও মানে অনন্য এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ইতালি-জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা।

তবে, উন্নতমানের তোষা পাট অর্থাৎ কাঁচামালের সংকট রয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাবে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য পাটজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক অর্ডার দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এখনই উদ্যোগ নিয়ে এ খাতের সমস্যাগুলো দূর করা প্রয়োজন। তাহলেই পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিপ্লব ঘটতে পারে।

জেলার কলোরোয়া, তালা ও সদর উপজেলার সহস্রাধিক নারী তৈরি করেন পাটের উন্নতমানের ব্যাগ, ওয়ালম্যাট, পাপোষ, শো-পিস, দরজা-জানালার পর্দাসহ আকর্ষণীয় নানা পণ্য।

পাটের পণ্যের কারিগর নাজমা খাতুনসহ অনেকেই বাংলানিউজকে জানান, পাটের ব্যাগের মজুরি আকার ভেদে ২৫০ টাকা থেকে শুরু। একটি ব্যাগ বানাতে সংসারের কাজের পাশাপাশি এক সপ্তাহ লাগে। একটি পাপোষ তৈরিতে এক থেকে তিনদিন লাগে। আকার ভেদে তাতে মজুরি মেলে ১৫০ টাকা। একটি ওয়ালম্যাট, তৈরিতে সময় লাগে তিন/চার ঘণ্টা। যার মজুরি ৬০ টাকা।

প্রায় ১৫ দিন লেগে যায় একটি টেবিল ম্যাট তৈরি করতে। যার প্রতি পিসের মজুরি আকার ভেদে মেলে ৫০০ টাকা। ৩০০০ হাজার টাকা মজুরিতে একটি দরজার পর্দা তৈরি করতে দুই মাস লাগে। নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি বাড়িতে বসে মাসে গড়ে ২০০০ টাকা আয় করতে পারে।

পাটের সুতা বোনেন বাগানবাড়ির সালেহা খাতুন। প্রতি হাজার সুতায় আড়াইশ’ টাকা মজুরি পান তিনি।

এ শিল্পের নানা সমস্যা-সম্ভাবনার কথা জানালেন তরুণ উদ্যোক্তা বুনন উন্নয়ন সংস্থার কর্ণধার মামুন হাসান।

বাংলানিউজকে তিনি জানান, সাড়ে তিনশ’ নারীকে দিয়ে তিনি পাটের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করিয়ে নেন। এজন্য ভালো মানের তোষা বা সাদা পাট প্রয়োজন হয়। কিন্তু তোষা পাটের সংকট লেগেই থাকে।

তিনি বলেন, সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করলে পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে। রাজধানীর রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কোর দ্য জুট ওয়ার্কার্স ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রকৃতির মাধ্যমে বায়ারদের সঙ্গে ডিল করেন তিনি। ২০১০ সালে শুরু। আর রপ্তানি শুরু করেন ২০১৩ সালে। জাপানে প্রতিবার পাটের ব্যাগের অর্ডার হতো ৩০০ পিস। ইতালিতে খেজুর পাতা ও পাটের চট দিয়ে তৈরি বাস্কেট যেত এক কন্টেইনার করে, দেড় হাজার পিস পাঠানো হতো জার্মানিতেও। কিন্তু ২০১৪ সালে টানা ৯০ দিনের হরতাল-অবরোধে সময় মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বায়াররা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ওই সময় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা লোকসান গুণতে হয় তাকে।

আন্তর্জাতিক বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন। এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। তাহলে উৎপাদনকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, তেমনি মধ্যসত্ত্বভোগীরাও একচেটিয়া মুনাফা তুলে নেওয়ার সুযোগ পাবে না।

উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বায়ারদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মেলার আয়োজন করতে পারলে বাজার সম্প্রসারণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সাতক্ষীরা পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক আশীষ কুমার দাস বাংলানিউজকে বলেন, পাটশিল্পের বিকাশে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করছি, এ খাতের বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত দূর হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
এসআই/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।