ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

এক লাখ হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত, বন্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৬
এক লাখ হেক্টর কৃষিজমি প্লাবিত, বন্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই

ঢাকা: গত কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করে সংসারের হাল ধরে আছেন সবজি চাষি রমিজুল ইসলাম। চলতি মৌসুমে বেশ ভ‍ালো আবাদ হলেও বড় ধরনের হোঁচট খেতে হলো এবারের বন্যার কারণে।


 
লাভ তো দূরের কথা ক্ষতি গুনতে হবে লাখ টাকার মতো। আউশ ধানেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলার এই কৃষকের।

তবে শুধু রমিজুল ইসলামের নয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্র জানায়, ২৩ জেলার কৃষকেরা এখন পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
 
তবে আশার কথা হলো, চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত নতুন করে বন্যা কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।  
 
ডিএই সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস বাংলানিউজকে জানান, সারাদেশে মাঠে প্রায় সাত লাখ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এখন পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার, ০৪ আগস্ট) এক লাখ ১৪ হাজার হেক্টর জমি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয় নি।
 
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের কৃষি আবহাওয়া বিভাগের আবহাওয়াবিদ মো. শামিম হাসান ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের বড় নদীগুলোর অববাহিকায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা নেই। ফলে বলা যেতে পেরে ওই সময় পর্যন্ত বন্যা হবে না।
 
তিনি জানান, আগামী ৮ আগস্ট নতুন করে বুলেটিন ইস্যু করা হবে। সেই সময়ে পরিস্থিতি ভিন্ন দেখা দিলে তাও জানানো হবে।
 
চৈতন্য কুমার দাস বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে অন্যতম হলো সবজি, আমন ও আউশ ধান, চীনাবাদাম, আখ। এর মধ্যে সবজি প্লাবিত হয়েছে চার হাজার ৫১৮ হেক্টর, আমন ধান ২০ হাজার হেক্টর। সবজির ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না হলেও ধানের ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে ওঠতে পারবেন কৃষকরা।
 
পরামর্শ হিসেবে কৃষিবিদরা জানান, আউশ ধান শতকরা ৮০ ভাগ পাকলে কেটে ফেলা যাবে। তাই জমি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে কেটে ফেলা উচিত। বন্যামুক্ত উঁচু জায়গায় বীজতলা তৈরি করে নাবি জাতের ধ‍ান বিআর ২২, ২৩, বিনাশাইল, নাজিরশাইল এর বীজ ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজতলায় বপন করা যাবে।
 
উফসী চারা পাওয়া না গেলে স্থানীয় জাতের আমন ধান (গেইঞ্জা, সাইটা, গড়িয়া) এর গজানো বীজ আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিটিয়ে বপন করা য‍াবে।
 
এছাড়া রোপা আমন ধানের ডুবে যাওয়া খেত থেকে অল্প দিনের মধ্য পানি সরে গেলে বেঁচে যাওয়া চারার পাতায় পলিমাটি লেগে থাকলে পানি ছিটিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। হালকা ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
 
তবে অনেক এলাকাতেই এখন ধানের চারার সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে বলেও একাধিক চাষি বাংলানিউজকে জানান। অনেকেই পাট ও ধানের ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। একাধিক চাষি বন্যা শেষে কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ জানান। এছাড়া ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে প্রণোদনা ও ঠিক মতো চারা পাওয়ার দাবিও তুলে ধরেন।
 
সার্বিক বিষয়ে ডিএই’র মহাপরিচালক ও কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় ডিএই’র বিভিন্ন টিম কাজ শুরু করে দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে কৃষি মন্ত্রণালয় ও ডিএই’র সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে প্রণোদনার বিষয়ে।
 
বর্তমানে গাইবান্ধায় বন্যা কবলিতি এলাকা পরিদর্শন করছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের উদ্দেশ্য হামিদুর রহমান জানান, কোনো চাষির পরামর্শ বা কিছু দরকার হলে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই একটা সমাধান পাওয়া যাবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৬
একে/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।