ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চাষিদের করণীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৬
ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চাষিদের করণীয় ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: ভারী বর্ষণ ও বন্যার কারণে মাঠে থাকা ধান ও সবজিসহ নানা ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। এছাড়া মাছেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে বন্যায়।

বন্যা দুর্গত অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
 
তবে কৃষিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি সচেতন হয়ে বন্যা পরবর্তী পদক্ষেপ নিলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
 
কৃষিবিদরা জানান, বন্যা দেখামাত্র সতর্ককতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কৃষি উপকরণ বিশেষ করে বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতি উঁচু ও নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে।
 
বন্যামুক্ত উঁচু জায়গায় বীজতলা তৈরি করতে হবে। উঁচু জায়গার অভাবে কলাগাছের ভেলা বা চাটাইয়ের উপর কাদামাটির প্রলেপ দিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরি করে দড়ির সাহায্যে খুঁটি বা গাছের সাথে বেঁধে রাখা যায়। দাপগ বীজতলায় উৎপাদিত চারা দু’সপ্তাহের মধ্যে উঠিয়ে জমিতে রোপণ করা য‍ায়।
নাবি জাতের ধান; বিআর-২২/বিআর-২৩/নাজিরশাইল/বিনাশাইল, স্থানীয় জাত যেমন- গাইঞ্জা আমন ধানের বীজ ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজতলায় বপন করে চারা তৈরি করা যেতে পারে।
 
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চারার পাতায় পলিমাটি লেগে থাকলে পানি ছিটিয়ে তা ধুয়ে দিতে হবে। বন্যার পর বেঁচে যাওয়া চারার দ্রুত বাড়বাড়তির জন্য পানি নেমে যাওয়ার ৭ দিন পর বিঘা প্রতি ৭-৮ কেজি ইউরিয়া ও ৫-৬ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
 
জমির ভালো জায়গার সুস্থ চারা থেকে কিছু চারা তুলে নিয়ে ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে হবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পরপরই চারার পাতা ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার বা ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পরিমাণ আগা কেটে দেয়া এবং অনুমোদিত মাত্রায় বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে।
 
নাবি রোপণের বেলায় ৫০ থেকে ৬০ দিনের বয়সী চারা প্রতি গুচ্ছতে ৭ থেকে ৮টি করে ঘন করে রোপণ করতে হবে। পাট গাছের ডগা কেটে মাটিতে পুঁতে দেয়ার পরে এ গুলো থেকে নতুন ডালপালা বের হলে তা থেকে মানসম্মত বীজ উৎপাদন করা যায়।

বন্যার পানি নেমে গেলে বিনা চাষে গিমাকলমি, লালশাক, ডাঁটা, পালং, পুঁই, ধনে, ভুট্টা, সরিষা, মাসকলাই, খেসারি আবাদ করা যায়‍।
 
আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলি জমির রস কমানোর জন্য মাটি আলগা করে ছাই মিশিয়ে দেওয়া এবং স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ইউরিয়া ও পটাশ সার প্রয়োগ করা উচিত।

বন্যাকালীন সময়ে সংরক্ষিত বীজ শুকিয়ে ছায়ায় ঠান্ডা করে পুনরায় সংরক্ষণ করতে হবে। রোপিত ফলের চারার গোড়ার পানি নিষ্কাশনের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে গোড়ায় মাটি দিয়ে সোজা করে খুঁটির সাথে বেঁধে নেওয়া যায়। গোড়ার মাটি শুকালে পরিমাণ মতো সার দিতে হবে।
 
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে জো আসা মাত্রই চাষ ও মই দিয়ে অথবা বিনা চাষে ডিবলিং পদ্ধতিতে তুলা বীজ বপন করা যায়। প্রয়োজনে পলিব্যাগে বা বীজতলায় তুলা বীজের চারা তৈরি করে নেওয়া যায়। জমি থেকে পানি নেমে গেলে ইউরিয়া ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
 
আখের জমি বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আগে গোড়ায় মাটি দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে। পানির স্রোতে আখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যথাসময়ে জমির আইলে ধৈঞ্চার বীজ বুনে দেওয়া ভালো। প্রতি ঝাড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি সুস্থ কুশি রেখে অতিরিক্ত কুশি কেটে দিতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আখ গাছ ঢলে পড়তে দেখা যায়। ঢলে পড়া থেকে আখ গাছকে রক্ষার জন্য গাছের ঝাড় মুঠি করে বেঁধে দিতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৬
একে/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।