ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

কৃষি

রূপসার পান চাষিদের কেউ হাসছেন কারও মাথায় হাত

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
রূপসার পান চাষিদের কেউ হাসছেন কারও মাথায় হাত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রূপসা থেকে ফিরে (খুলনা): “আমাগে এলাকার সজ্ঞলের (সবার) পান ক্ষেতে বর্ষার পানি জমছিলো। যারা পানি নামাতি পারিছে তাগে (তাদের) কপালডা ভালো আছে।

আর যাগে ক্ষেতে পানি আটকে গ্যাছিলো তাগে কপাল পুড়ছে। ”

খুলনার রূপসার পান চাষিদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এভাবেই বলছিলেন উপজেলার স্বল্পবাহিরদিয়া গ্রামের মনির উদ্দিন শেখ। এ নিয়ে কথা হচ্ছিল স্বল্পবাহিরদিয়াসহ বড় বাহিরদিয়া, ছোট বাহিরদিয়া, ঘাটভোগ, গিলাতলা এলাকার আরও বেশ ক’জন চাষির সঙ্গে।  

আলাপে জানা যায়, আগস্ট মাসের ভারি বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার পর যেসব চাষি সঙ্গে সঙ্গে পানি নামাতে পেরেছেন তাদের বরজ ভালো হয়েছে। আর যারা পারেননি তাদের বরজের পান পচে গেছে।  মনির উদ্দিন শেখ বলছিলেন, এলাকায় বাত্তা নিলে (জিজ্ঞাসা করলে) কেউ ক’বে (বলবে) পান ভালো অয়ছে। আবার কেউ কবে পইচে গেছে।  

তিনি জানান, তার মতো যাদের অতিবর্ষণে পান গাছের গোড়া পচে যায়নি তাদের পান ভালো হয়েছে। প্রতিবছরের চেয়ে দামও ভালো পাচ্ছেন এবার। যে কারণে তাদের মুখে হাসি।  

মনির উদ্দিনের মতে, কয়েক যুগ ধরে রূপসায় অন্যান্য অর্থকরী ফসল চাষের পাশাপাশি পান চাষও অনেক জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়ে উঠেছে। ফলে সাধারণ ও প্রান্তিক চাষিদের দৃষ্টি ছিল পান চাষের দিকে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষে খরচ কম, কিন্তু মুনাফা বেশি হওয়ায় দিন দিন পান চাষির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।

বাহিরদিয়া এলাকার আরেক পান চাষি সফিকুল ইসলাম বলেন, পানের বরজ করে সংসার চালাই। পান চাষে আমাদের পরিবারে সুদিন ফিরেছে। তবে এবার বর্ষা ও জলাবদ্ধতা চাষিদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, বাঁশ, খৈলের দাম বেশি হওয়ায় এখন বরজ তৈরিতে আগের তুলনায় খরচ অনেক বেশি যায়। কৃষাণের দামও বেড়ে গেছে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে পানের বরজ তৈরি করে অতি বর্ষার কারণে এখন পান গাছের গোড়ায় পচন ধরেছে। তার পানের বরজে পচন কম হলেও অন্য পান চাষিরা বর্ষার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

সফিকুল আক্ষেপ জানিয়ে বলেন, এ এলাকার পান চাষিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে হানিফের। যার একাধিক পানের বরজ রয়েছে।

পান চাষি ইসরাইল ইসলাম বলেন, বাপ দাদার কাছ থেকে পান চাষ শিখেছি। পান চাষ করেই এ পর্যন্ত লাভের মুখ দেখে এসেছি। সংসার চলছিল ভাল। তবে আর বুঝি এ পেশায় টিকে থাকা যাবে না। কেননা এবার সব বরজের সব পান গাছ পঁচে গেছে।  

মনির উদ্দিন শেখ, সফিকুল ইসলাম ও ইসরাইল ইসলামদের মতো উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা বলেন, প্রবল বর্ষণে অনেকের পান বরজ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা পান চাষে জড়িত থাকায় অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে চাষিদের পরিবারে। তাই পান চাষিরা অবিলম্বে সরকারি সহায়তা কামনা করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রূপসা উপজেলায় এবার ২০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। যার মধ্যে ৭০ হেক্টর জমির পান পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।  

এ বিষয়ে রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অধিকাংশ বরজে পানের বাম্পার ফলন হলেও আগস্টের অতি বৃষ্টিতে গোড়া পচন রোগ চাষিদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি জানান,  রূপসায়  এবার ২০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। যার মধ্যে ৭০ হেক্টর জমির পান পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ঘাটভোগ এলাকার চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।  

উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
এমআরএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।