দুই যুগ আগে একটি-দু’টি বাগানে গোলাপের উৎপাদন শুরু, এখন ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের আরও দশ-বারটি গ্রামে। গ্রামগুলোর আশি থেকে নব্বই ভাগ মানুষই এখন গোলাপ চাষ করছেন।
গোলাপের এই বাহারী রঙ দেখতে যেতে হবে না খুব বেশি দূরে- রাজধানীর অদূরে কয়েক কিলোমিটার গেলেই মিলবে চারা তৈরি থেকে শুরু করে ফুটন্ত গোলাপ বিক্রির হরেক চিত্র। রঙ ও সুবাস ছড়ালেও জংলা জাতের গাছে ভর করে বড় হচ্ছে রক্ত লাল ‘মিরান্ডি’ নামক গোলাপ গাছ।
রক্ত লাল গোলাপ দেখে এর উৎপাদন যতোটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে গোলাপের কাঁটার আঘাতের চেয়েও কঠিন উৎপাদন প্রক্রিয়া। পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবসের আগে বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্যাপুর গ্রামে বাংলানিউজের চোখে উঠে এসেছে গোলাপের চারা উৎপাদন প্রক্রিয়া।
সাদুল্যাপুর বাজারের পাশেই মো. শাহজাহানের গোলাপ বাগান। সেই বাগানে তিন ছেলে ও কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে পরিচর্যায় ব্যস্ত শাহজাহান।
সবচেয়ে ছোট ভাই আব্দুস সবুর তখন তালপাতার ছায়ায় বসে চারা তৈরির কাজ করছিলেন। জানালেন, জংলি (দেশি) জাতের ডাল কেটে মাটিতে রোপণের এক মাস পর কুশি গজায়। সেই চারাটি পলিব্যাগে রাখা হয় আরও ১৫ দিন। এরপর একটি সতেজ কুশির গোড়ায় থাইল্যান্ডের ‘মিরান্ডি’ জাতের গোলাপের চোখ বসানো হয়। চোখ লাগানোর এক মাস পর চারা উপযোগী হয়।
চারা তৈরির প্রক্রিয়া হিসেবে জংলি চারার একটি কুশির গোড়ায় চাকুর ধারালো মাথা দিয়ে ফেঁড়ে সবুজ অংশ দুই পাশে আলাদা করা হয়। তবে যেনো ডালের শক্ত অংশে আঘাত না লাগে। এরপর মাতৃগাছের চোখ কেটে সেখানে বসিয়ে পলিথিন দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়।
চারার পরিচর্যা হিসেবে চোখ বসানোর কয়েক দিন রোদ থেকে দূরে রাখা এবং সামান্য পানি দিয়ে সতেজ রাখতে হবে। কয়েক দিন পরই সেই চোখ ফুটে পাতা গজাবে, ফুটবে ফুল। তবে বাণিজ্যিক চাষের জন্য প্রথম ফুলটি কেটে ফেলার পরামর্শ দেন আব্দুস সবুর।
দিনে প্রায় সাতশ’ চারা তৈরি করতে পারেন জানিয়ে সবুর বলেন, গোলাপের পাশাপাশি এই চারা বিক্রিতেও লাভ। প্রতিটি চারা তৈরি হয় পঞ্চাশ থেকে একশ’ টাকায়। আর এক বিঘা জমিতে রোপণ করা যাবে ছয় হাজার চারা। ছয়-সাত বছর ভালো ফলন দেবে গোলাপ গাছ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
এসআরএস/এটি