তামাক চাষে স্বাস্থ্যহানীর পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে একই জমিতে তামাক চাষের ফলে জমির উর্বরতা শক্তিও হ্রাস পেয়েছে। বিগত বছরে ভালো ফলন না পাওয়ায় অনেক চাষি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন তামাক চাষ থেকে।
এজন্য আলু ও সবজিসহ সব কৃষি পণ্যের বহুমুখি বাজার সৃষ্টি করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান চাষিরা।
জেলার আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হয়। সম্প্রতি এই উপজেলা ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
চাষিরা জানান, বেশি মুনাফা ও তামাক কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসে কয়েক বছর ধরে তামাক চাষ করে আসছিলেন তারা। কিন্তু টানা কয়েক বছর একই জমিতে তামাক চাষের ফলে জমির উর্বতরা শক্তি কমে গেছে। শুধু তাই নয়, তামাক চাষের ফলে অনেকের শরীরে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন রোগ। ফলে জমির উর্বতরা শক্তি রক্ষায় অনেক চাষি তামাকের পরিবর্তে এ বছর আলুর চাষ করেছেন। তবে আলুর আবাদ বেড়ে যাওয়ায় দাম নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। বর্তমানে প্রতি মণ আলু ১৭০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে তামাকের তুলানায় লাভ কিছুটা কম হলেও জমির উর্বরতা ও জনগণের স্বাস্থ্যহানির কথা ভেবে আলু চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। তবে বড় চাষিরা আলু হিমাগারে রাখছেন বেশি দামে বিক্রির আশায়। আলুর বহুমুখি ব্যবহার ও রফতানি বাড়ালে আলুর আবাদ বৃদ্ধি পাবে।
ভাদাই বড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া বাংলানিউজকে জানান, কয়েক বছর ধরে তামাক চাষের ফলে তার জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমতে শুরু করেছে। উৎপাদন কম হওয়ায় গেল বছর তামাকে লোকসান গুণতে হয়েছে। তাই এ বছর তামাক চাষকে লাল কার্ড দেখিয়ে এক একর জমিতে আলু চাষ করেন তিনি। এবার বেশ মুনাফা পেয়েছেন তিনি।
অপর কৃষক সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ জেলায় তারাই প্রথম ভার্জিনাল তামাক চাষ শুরু করেন। প্রথমে ফলন ভালো হওয়ায় মুনাফাও ভালো পেয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তামাক চাষের কারণে বিগত দুই বছর ধরে উৎপাদন কমে গেছে। তাই এ বছর মাত্র ২৭ শতাংশ জমিতে তামাক আর এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন।
মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন তিস্তা চরাঞ্চলের চাষি বাদশা আলম বাংলানিউজকে জানান, গেল বছর তিন দোন (২৭ শতাংশ) জমিতে তামাক চাষ করলেও এ বছর সব জমিতেই আলু আর সবজি চাষ করেছেন।
এ বছর তার আলু ক্ষেত দেখে অনেক চাষিই আগামিতে তামাক চাষ ছাড়ার কথা বলছেন- যোগ করেন বাদশা আলম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর লালমনিরহাটে ১১ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে তামাক চাষ হলেও এ বছর কমে প্রায় নয় হাজার হেক্টর জমিতে। গেল বছর এ জেলায় আলুর চাষ হয় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে। যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫৩০ হেক্টরে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক তামাক কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, ফলন কমে যাওয়া ও তামাক বিরোধী প্রচার-প্রচারনার কারণে এ বছর তামাক চাষ তুলনামূলক কম হয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিদু ভুষণ বাংলানিউজকে জানান, চাষিরা যেদিকে মুনাফা বেশি পায়, সেদিকেই ঝুঁকে পড়ে। কৃষি পণ্যের বহুমুখি বাজার সৃষ্টি করতে পারলে আগামী দিনে বিষবৃক্ষ তামাক চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
এসআই