ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ভোলার চরে হাঁস পালনে ভাগ্য বদল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
ভোলার চরে হাঁস পালনে ভাগ্য বদল ভোলার চরে হাঁস পালন করে ভাগ্য বদল-ছবি-বাংলানিউজ

চর চটকিমারা, ভেদুরিয়া থেকে ফিরে: চারদিকে নদী। মাঝখানে ছোট্ট দ্বীপচর। তেঁতুলিয়ার তীরঘেঁষা অনুন্নত এক জনপদে প্রায় দুই হাজার মানুষের বাস। এদের বেশিরভাগই পেশায় জেলে। মাছ শিকার করে জীবনধারণের পাশাপাশি কৃষিসহ গৃহপালিত পশু-পাখি পালন করে এরা। 

তবে কৃষি কিংবা পশুপালনে তেমন সফলতা না পেয়ে এখন হাঁস পালনে ঝুঁকে পড়েছেন সেখানকার বেকার যুবকরা। হাঁস পালন করেই ভাগ্য বদল হচ্ছে তাদের।

ভোলা সদরের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চর চটকিমারা গ্রামের চিত্র এটা।  

চর চটকিমারা ভেদুরিয়া ইউনিয়নের একটি অংশ। হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এখানে।  খামারে হাঁস পালন করে বেকারত্ব দূর করছেন বেকার যুবকরা। হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি করে পারিবারিক স্বচ্ছলতার দেখা পেয়েছেন তারা।  

অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় হাঁস চাষে ঝুঁকে পড়ছেন অনেকেই। শুধু চর চটকিমারা নয়, হাঁস পালনের এমন চিত্র দেখা যায় ভেলুমিয়া, রাজাপুর, কাচিয়া ও ইলিশা ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে। বসতবাড়ির আঙ্গিনা এবং পতিত জমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাঁসের খামার। মুনাফা, শ্রমিক মুজরি, বাসস্থান তৈরি ও খাদ্যের স্বল্পতা না থাকায় এসব চরে দিন দিন হাঁস চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

হাঁস চাষ করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন যুবকরা। আর তাই সহজ বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে হাঁস চাষের ব্যাপক প্রসার লাভ করছে চরাঞ্চলে।

ভোলার চরে হাঁস পালন করে ভাগ্য বদল-ছবি-বাংলানিউজচর চটকিমারা এলাকার একজন সফল খামারী মোসলেহ উদ্দিন। বললেন, ‘দুই বছর আগে কৃষিকাজ করেছি। কিন্তু সার-কীটনাশক, ক্ষেতমজুর ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় তেমন লাভ হতো না। তাই কৃষিকাজ বাদ দিয়ে হাঁস পালন শুরু করি। ৩০০ হাঁস দিয়ে খামার শুরু করে এখন আমার খামারে ৬০০ হাঁস। এর মধ্যে ৩০০ হাঁস ডিম দিচ্ছে। ডিম বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি। ’

হাঁস পালনকারী কামাল বলেন, তার খামারে ৬০০ হাঁসের মধ্যে প্রতিদিন দুই হাজার টাকার ডিম বিক্রি হয়। এতে সংসারে ভালো রোজগার হচ্ছে।

হাঁস খামারী আবদুল হাই বলেন, ‘৫০০ হাঁসের মধ্যে প্রতিদিন ৩০০ ডিম দেয়। ডিম বেঁচে ২ হাজার ৭’শ টাকা রোজগার। তবে হাঁসের খাবার খরচ হয় এক হাজার টাকা। দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অনেক ভালোভাবেই দিন কাটাচ্ছি। ’

এক খামারীর স্ত্রী জোসনা বলেন, ‘পরিবারের কাজের ফাঁকে হাঁসের খামার দেখাশুনা করি। আমাদের একমাত্র আয়ের উৎসই হাঁস পালন। ’

চর চটকিমারা গ্রামের কয়েকজন যুবক জানালেন, হাঁসের ডিম এবং হাঁস বিক্রির টাকায় অনেকেই নিজের ভাগ্য বদল করেছেন। আর তাই একজনকে দেখে অন্যজনও ঝুঁকে পড়ছেন হাঁস পালনে। এভাবেই দারিদ্র দ‍ূর হচ্ছে।

খামারীরা জানালেন, বিল ও নদীর তীরে প্রাকৃতিক শামুকসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খায় হাঁস। এছাড়াও ধান কিনে হাঁসের খাবার দিতে হয়, এতে শ্রমিক লাগে না। খামারীরাই হাঁসের দেখাশোনা করতে পারেন।  

ভোলার চরে হাঁস পালন করে ভাগ্য বদল-ছবি-বাংলানিউজতারা জানালেন, একেকটি খামারে গড়ে ৩০০-৬০০টি হাঁস পালন করা যায়। হাঁস দল  বেঁধে খাবার খায় এবং দিন শেষে খামারে ফিরে আসে।  তবে মাঝে মধ্যে অসুখে আক্রান্ত হলে রোগাক্রান্ত হাঁস সরিয়ে ফেলতে হয়। নইলে মহামারীর আশঙ্কা থাকে।  

তবে খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং হাঁসের প্রতি বাড়তি নজর রাখলে খামারে তেমন বিপর্যয় দেখা দেয় না বলে জানালেন খামারীরা।

ভোলা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দীনেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘জেলা সদরে প্রায় ৫৬টি হাঁসের খামারে অন্তত দুই লাখের অধিক হাঁস রয়েছে। যা থেকে গড়ে প্রতিদিন এক লাখ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘সদরের বিভিন্ন চরে হাঁস চাষ করে অনেকেই বেকারত্ব দূর করেছেন। আমরা চাষীদের কারিগরি সহযোগিতার পাশাপাশি সব ধরনের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি, হাঁস চাষ প্রসারে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
এমআইএইচ/জেএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।