ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ক্ষতি পোষাতে শস্যবিমায় ঝুঁকছেন কৃষকরা

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
ক্ষতি পোষাতে শস্যবিমায় ঝুঁকছেন কৃষকরা ক্ষতি পোষাতে শস্যবিমায় ঝুঁকছেন কৃষকরা- ছবি: বাংলানিউজ ফাইল ফটো

ঢাকা: বন্যা কিংবা খরার ক্ষতি পোষাতে শস্য বিমার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এতে বন্যা-খরার পাশাপাশি অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া এবং রোগে নষ্ট হওয়া ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠছেন তারা। ফলে স্থায়ীভাবে বিমা করতে সাধারণ বিমার কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষকরা।  

সাধারণ বিমা করপোরেশনের(এসবিসি) আবহাওয়া-সূচকভিত্তিক পরীক্ষামূলক শস্যবিমা প্রকল্পে এ চিত্র দেখা গেছে। ৪ বছর মেয়াদী পাইলট প্রকল্পে এখন পর‌্যন্ত ৪ মৌসুমের ফসলের ওপর রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলার ৬ হাজার ৭৯৯টি শস্যবিমা করেছেন কৃষকরা।

এসবের মধ্যে চার হাজারের বেশি কৃষক ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬৪ টাকা ক্ষতিপূণ পেয়েছেন।

এসবিসি’র তথ্যমতে, সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)) অর্থায়নে (জুলাই ২০১৩ থেকে জুন ২০১৭) চার বছর মেয়াদে নেয়া প্রকল্পটিতে প্রথমে রাজশাহী জেলার পবা উপজেলায় আমন ধানের খরাঝুঁকির ওপর বিমা করানো হয়। এই এলাকায় ২’শ বিঘা জমির ওপর ১৬৫ জন কৃষক বিমা করেন। যাতে বিঘাপ্রতি ভ্যাটসহ ১০০টাকা হারে ২০ হাজার টাকা প্রিমিয়াম হয়। এর মধ্যে ১৪৭ জন কৃষককে ২৯ হাজার ৪০০টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় দফায় পবা ও তানোর উপজেলায় আলু ফসলের ক্ষতি পোষাতে ৬৩.৫০ বিঘা জমির জন্য ১৬৭জন কৃষক বিমা করেন। ১ হাজার ভ্যাটসহ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রিমিয়াম আদায় হয়। সবাইকে বিঘাপ্রতি ৫০০টাকা হারে ২৯ হাজার ৪০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

তৃত্বীয় দফায় অন্যান্য ঝুঁকির পাশাপাশি বন্যার ঝুঁকিতে প্রকল্পে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমন ধানের ‍উপর ৪ হাজার ৮৩৪ দশমিক ৫০ বিঘা জমির উপর ৫ হাজার ৬৭ জন কৃষক বিমা করেন। বিঘাপ্রতি ৫২৯ টাকা ভ্যাটসহ মোট ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭৯ দশমিক ৫০ টাকা আদায় হয়। এর মধ্যে রাজশাহী ও নোয়াখালী জেলায় তিন হাজার ৭৪৮জন কৃষককে ১৬ লাখ ৯৩হাজার ৪১৪ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

চতুর্থ দফায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিজনিত ঝুঁকির জন্য রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় বোরো ধানের ওপর ১৪০০টি বিমা হয়েছে। যাতে ভ্যাট সহ প্রিময়াম আয় হয়েছে ৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এখনো এই মৌসুমের কার‌্যক্রম চলেছে।  

প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক ও এসবিসি’র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ওয়াসিফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকিতে কৃষিআয়ের ক্ষতি কমাতে ও কৃষকদের সামর্থ্য বাড়াতে এই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। কেননা দেশের মূল চালিকাশক্তি আমাদের কৃষক। তাই সরকার কৃষকদের জন্য সহায়তার হাত বাড়াতে, তাদের আর্থিক সুরক্ষা দিতে কৃষকবান্ধব এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে শস্যবিমায় কৃষকদের  ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে।

‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ হাজার কৃষককে বিমার আওতায় আনা এবং ১২ হাজার কৃষককে সচেতন করার লক্ষ্য ছিলো আমাদের’ –একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরই মধ্যে ৬ হাজার ৭৯৯জন কৃষক শস্যবিমা করানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজারের বেশি কৃষককে বিমার ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ১০ হাজারের বেশি কৃষককে ৫৩৮টি ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন(এফজিডি) এবং ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে সচেতন করা হয়েছে। বাকিদের প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যেই আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ অর্থাৎ অকালীন বৃষ্টিপাত,ঘূর্ণিঝড়,বন্যা এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রার প্রভাবজনিত ঝুঁকির বিষয়ে বিষয়ে সচেতন করা হবে।

এ ছাড়াও স্টেক হোল্ডার প্রতিষ্ঠানের ৪০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ এবং ২টি ওয়ার্কশ করা হয়েছে। যাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের  ২শ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। নতুন  করে ২০টি  স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়াকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে বলে জানা তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
এমএফআই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।