ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

লোকসানে সাটুরিয়ার ঢেঁড়স চাষীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৭
লোকসানে সাটুরিয়ার ঢেঁড়স চাষীরা ভাইরাসে আক্রান্ত সাটুরিয়ার ঢেঁড়স ক্ষেত, ছবি বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: ‘ভাইরাল’ নামে এ প্রকার ভাইরাসের কারণে লোকসানে পড়েছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ঢেঁড়স চাষীরা। যার ফলে ঢেঁড়স চাষীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

চাষীরা বলেছেন, এ ‘ভাইরাসের ফলে ফলনের পরিমান কমে গেছে। গাছের রং ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে।

আবার যে পরিমান ফলন হচ্ছে তাও আবার আকারে ছোট, সাদা ও অতিরিক্ত বাঁকা থাকায় বাজারে এর কোনো চাহিদা নেই। এতে করে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছেন চাষীরা।

সবজির ভান্ডার হিসেবে খ্যাত মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা। উপজেলার চর-ধানকোড়া, কামতা, তারাবাড়ি, নয়াবাড়ি, হরগজ, জান্না, কান্দাপাড়া ও খল্লী ধানকোড়াসহ আশেপাশের এলাকায় শতাধিক সবজি চাষী ঢেঁড়সের আবাদ করেছেন। প্রতিবছর ঢেঁড়স চাষে প্রচুর পরিমানে মুনাফা হলেও এবার খরচের টাকা উঠানো নিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন চাষীরা।
ভাইরাসে আক্রান্ত সাটুরিয়ার ঢেঁড়স ক্ষেত, ছবি বাংলানিউজ

চর-ধানকোড়া এলাকায় নিয়মিতভাবে সবজির আবাদ করেন সোনা মিয়ার ছেলে ফরহাদ হোসেন। সবজির আবাদ করে বেশ লাভবানও তিনি। গত বছর ৩০ হাজার টাকা খরচ করে দুই বিঘা জমিতে ঢেঁড়সের আবাদ করেছিলেন। ঢেঁড়সের ফলন ভালো হওয়ায় দুই বিঘা জমি থেকে ৯০/৯৫ হাজার টাকার ঢেঁড়স বিক্রি করেন তিনি।    

চলতি বছরে প্রায় তিন বিঘা জমিতে ঢেঁড়সের আবাদ করেছেন তিনি। জমি তৈরি, সার, বিষ, বীজ ও জমির পরিচর্যা খরচ বাবদ এবার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ঢেঁরসের ফলন দেওয়া শুরু হওয়ার আগেই ঢেঁড়স গাছগুলো ফ্যাকাসে আকার ধারন করেছে। গাছে ফলনের পরিমান একেবারে কম। ঢেঁড়সগুলো আকারে ছোট, সাদা রংয়ের এবং পোঁকায় আক্রান্ত ও বাঁকা। যে কারনে বাজারে ওই ঢেঁড়সের কোনো চাহিদা নেই। এবার ঢেঁড়স চাষে তিনি খরচের অর্ধেক পরিমান টাকা তুলতে পারবে না বলেও জানান।
ভাইরাসে আক্রান্ত সাটুরিয়ার ঢেঁড়স ক্ষেত, ছবি বাংলানিউজ

গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আতোয়ার রহমান কামতা এলাকার সবজি চাষী। এলাকার এক বিঘা জমিতে তিনি ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ঢেঁরসের আবাদ করেন। এতে করে তার প্রায় পুরো টাকাই লোকসান হবে বলে মন্তব্য করেন।

তারাবাড়ি এলাকার আব্দুস সালাম তিন বিঘা জমিতে ৫০ হাজার টাকা ব্যায়ে ঢেঁড়সের আবাদ করেছেন। কিন্তু ঢেঁড়সের ফলন না পাওয়ার কারনে তিনি বেশ হতাশায় পড়েছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে তিনি বিভিন্ন কীটনাশক দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। এ পর্যন্ত তিনি ১০ হাজার টাকার ঢেঁড়স বিক্রি করেছেন এবং আর হয়তো ১০ টাকার ঢেঁড়স বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী। বাকি টাকা পুরোটাই লোকসানে।

ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা বাংলানিউজকে জানান, ধানকোড়া বাজারের রাজিব ট্রেডার্সের সোহরাব হোসেন ও রফিক এন্টার প্রাইজের রফিক হোসেনের নিকট থেকে বায়ার কোম্পানির হাইব্রিড বীজ ৩২শ টাকা কেজি হিসেবে ক্রয় করেছিলেন। প্রতি বছর ওই বীজে ভালো ফলন হলেও এবার বেশ ক্ষতিগ্রস্থ। তবে এ বিষয়ে বীজ বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বীজের বিষয়টি নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভাইরাসে আক্রান্ত সাটুরিয়ার ঢেঁড়স ক্ষেত, ছবি বাংলানিউজ

সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, সাটুরিয়া উপজেলার বেশ কিছু সবজি চাষীরা এবার ঢেঁড়সের আবাদ করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে চাষীদেরকে ছত্রাক নাশক স্প্রে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতেও তারা ঢেঁড়স গাছগুলোকে পুরোপুরি রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি। বিষয়টি কৃষি অধিদফতরের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলীমুজ্জামান মিয়া বাংলানিউজকে জানান, যে সমস্ত সবজি চাষীদের ঢেঁড়সের গাছগুলো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ফলন কম ও আকারে ছোট। তারা সকলেই ভেজাল বীজ ক্রয় করেছে। বীজের মধ্যে ভাইরাল রোগ থাকার কারনে ওই গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই রোগ প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেই বলেও জানান তিনি।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ ফারজানা সিদ্দিকী জানান, ভেজাল বীজের কারনে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হলে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৭
বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।