ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

দিনাজপুরে ভুট্টা চাষে নীরব বিপ্লব

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
দিনাজপুরে ভুট্টা চাষে নীরব বিপ্লব দিনাজপুরে ভুট্টা চাষে নীরব বিপ্লব। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর এলাকার কৃষক মাসুদুর রহমান মাসুদ।

তার বাবা ১৩ বছর আগে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর ১৫ বিঘা পৈত্রিক জমি পান তিনি।

বাবার আমলে এই ১৫ বিঘার মধ্যে ১০ বিঘা জমিতে চাষবাদ করা হলেও পানির অভাবে বছরজুড়ে পড়ে থাকতো অবশিষ্ট ৫ বিঘা জমি। কিন্তু ভুট্টা চাষে তুলনামূলকভাবে পানি সরবরাহ কম লাগে। তাই মাসুদ ফেলে রাখা জমিতে শুরু করেন ভুট্টার চাষ। অনান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে লাভও বেশি।

লাভ হওয়ায় ভুট্টা চাষের জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন মাসুদ। বর্তমানে তিনি দুই বিঘা বর্গা জমিসহ মোট ১৭ বিঘা জমিতে ভুটা চাষ করছেন। স্বল্প খরচ ও পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় মাসুদের মতো অনেক কৃষকের কাছেই জনপ্রিয় ফসল হয়ে উঠেছে ভুট্টার চাষ। এমনটাই বলছিলেন সফল ভুট্টাচাষী মাসুদ।

মাসুদুর রহমান মাসুদ বাংলা নিউজকে আরো বলেন, আজ থেকে এক যুগ আগে দিনাজপুর জেলায় ভুট্টা চাষ প্রায় করতোই না কৃষক। প্রথমে পড়ে থাকা অনাবাদি জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয় ভুট্টার চাষ। স্বল্প খরচে অধিক লাভের মুখ দেখার পর কৃষকেরা এটি চায়ে ক্রমশ উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এভাবে অপ্রচলিত এই শস্যটির চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কৃষকের কাছে। কৃষকরা যখন দেখলেন অনান্য ফসল আবাদ করে সুবিধাজনক লাভ হয় না, তখন কারা লোকসানি ফসল বাদ দিয়ে শুরু করেন ভুট্টা চাষ। যা এখন বাড়তে বাড়তে কয়েক গুণ। বলা যায় দিনাজপুর জেলায় ভুট্টা চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরে ভুট্টা চাষ শুরু হয় এক যুগ আগে-- ২০০৫ সালে। যে সকল জমির মাটির উর্বরা শক্তি নাই ও ধান-গমসহ অনান্য ফসল চাষাবাদের জন্য উপযুক্তও নয় যেখানে আবাদ হয়না বারো মাস সেখানেই শুরু হয় ভুট্টা চাষ। অনাবাদি জমিতে স্বল্প খরচে  ভুট্টা চাষ শুরু করে অধিক লাভ পাওয়ায় কৃষকরা অনান্য ফসল ত্যাগ করে অনেক আবাদি জমিতেও ভুট্টা চাষ শুরু করেন। এভাবেই কৃষকরা ভুট্টা চাষে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

দিনাজপুর জেলায় ২০০৫ সালে ৩৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর, ২০০৬ সালে ৩৫ হাজার ৭০০ হেক্টর, ২০০৭ সালে ৫১ হাজার ৪৮৪ হেক্টর, ২০০৮ সালে ৫৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ২০০৯ সালে ৩৭ হাজার ৫০৬ হেক্টর, ২০১০ সালে ৩৬ হাজার ২৫০ হেক্টর, ২০১১ সালে ৪৮ হাজার ১৫৮ হেক্টর, ২০১২ সালে ৫৬ হাজার ৯৪৬ হেক্টর, ২০১৩ সালে ৬০ হাজার ৬৬৮ হেক্টর, ২০১৪ সালে ৬৩ হাজার ৪৭৫ হেক্টর, ২০১৫ সালে ৬৭ হাজার ১৭ হেক্টর, ২০১৬ সালে ৬৭ হাজার ৩৫৬ হেক্টর ও চলতি মৌসুমে ২০১৭ সালে ৬৮ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ চলছে।

দিনাজপুর বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সফল ভুট্টাচাষী আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এক সময় আমি আমার ৭ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করতাম। কিন্তু যখন দেখলাম অনান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে লাভ বেশী হয়, তখন অন্য ফসল চাষ বাদ দিয়ে ভুট্টা চাষ শুরু করি। এখন প্রতি বছর ভুট্টা চাষ করি। চলতি মৌসুমে আমার সাত বিঘাসহ অন্যের আরো এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করছি।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, দিনাজপুরের কৃষকরা ভুট্টা চাষে ব্যাপক বিপ্লব ঘটিয়েছেন। এক যুগ আগে ৩৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ শুরু। এখন তা বেড়ে ৬৮ হাজার ১০২ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। আশা করছি, দিনকে দিন তা আরো বাড়বে। ভুট্টা চাষে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সঠিক পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। ভুট্টা চাষে কৃষকদের আরো উৎসাহিত করতে ব্যাপক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।