ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বাজারের লাগাম টানতে পারছে না নতুন চাল

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৭
বাজারের লাগাম টানতে পারছে না নতুন চাল নতুন ধান মাড়াই। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: মাঠের এলোমেলো সোনা রঙা ধান আগে ঘরে তোলায় ব্যস্ত কৃষক। বৈরি আবহাওয়ার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে ফসলের খেত থেকে বাড়ির উঠোন পর্যন্ত কৃষকদের করতে হচ্ছে দৌঁড়ঝাপ। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বোরোর ফসল ঘরে তোলা নিয়ে গ্রামে গ্রামে চলছে কর্মযজ্ঞ।

এরমধ্যেও থেমে নেই নতুন ধান বেচাবিক্রি। প্রতিকূলতার মাঝেও মণে মণে ধান কিনছেন ব্যাপারীরা।

ট্রাকে বা অন্য যানবাহনে ভরে চলে আসছে মহাজনের ঘরে। সেখান থেকে পড়ছে হাউজে। সিদ্ধ-শুকনার পর যাচ্ছে সেমি অটোমেটিক রাইস মিলে। মিলের যান্ত্রিক ডলায় বেরিয়ে আসছে চাল। ভরা হচ্ছে বস্তায়।

এরপর সেই নতুন ধানের নতুন চাল ছাড়া হচ্ছে বাজারে। কিন্তু বাজার আগের মতই বেসামাল রয়েছে। উর্ধ্বমুখি বাজারের লাগাম টানতে পারছে না নতুন চাল। বরং নতুন চালের দামও ক্রমেই বেড়ে চলছে।

লাগামহীন চালের বাজারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ভোক্তা সাধারণ। নিন্ম ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষকে চালের বাড়তি বাজার ভীষণ চিন্তিত করে তুলেছে।

বগুড়ার বেশ কয়েকটি উপজেলার ধান চালের হাটবাজারে আসা বিক্রেতা ও ক্রেতা সাধারণের সঙ্গে কথা হলে বাজারদর সম্পর্কে এমনই তথ্য উঠে আসে।

বাদশা মিয়া পেশায় রিকশাচালক। ভাড়ায় রিকশা চালান। মহাজনকে জমা বাবদ ৩শ’ টাকা দিতে হয়। এরপর যে টাকা থাকে সেই টাকায় চলে তার তিন সদস্যের অভাবী সংসার।

এই রিকশাচালকের ভাষায়, ঘরে চাল থাকলে চিন্তা কিছুটা কম হয়। নূন-ভর্তা যাই হোক না কেন অন্তত খাওয়াটা চলে। ভেবে ছিলাম নতুন ধান নামলে চালের দাম কমবে। কিন্তু বাজারের হাবভাব দেখে তেমনটা মনে হচ্ছে না। এতে তার মত অভাবীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

ভ্রাম্যমাণ ভাজিপুরি দোকানি আমির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ছয় সদস্যের সংসার তার। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে। বয়সের কারণে বাবা-মা তেমন কাজকর্ম করতে পারেন না। তার একার আয়ে চলে সংসার।

তাই চাল কিনতে গেলে অন্য বাজার করার টাকা থাকে না। আবার অন্য কিছু কিনলে চাল কেনার টাকা হয় না। অথচ বেড়েই চলছে চালের দাম। এ অবস্থায় তার মত নিন্ম আয়ের মানুষের বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নতুন ধানের চাল ওঠা শুরু করেছে। সীমিত জাতের ধানের নতুন চাল বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে। তবে বাজারদর অত্যন্ত চড়া।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) ও বুধবার (৩ মে) নন্দীগ্রামের ওমরপুর, শেরপুরের বারোদুয়ারি, মির্জাপুরসহ বেশ কয়েকটি হাটবাজারে নতুন মিনিকেট চাল প্রতি বস্তা (সাড়ে ৯৩ কেজি) ৪১০০-৪১৫০ টাকা, কাজললতা ৪২০০-৪৩০০ টাকা, সুবললতা ৪২০০-৪৩০০ টাকা, বিআর-২৮ ৩৯০০-৪০০০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।

জালাল হোসেন, শরীফ উদ্দিন, জমির উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, বাজারে নতুন ধানের দাম অত্যন্ত বেশি। বেশির ভাগ ধান কৃষকের বাড়ি থেকেই কিনতে হচ্ছে।

তারা জানান, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, প্রতিমণ মিনিকেট ভেজা ৮৫০-৮৭০ টাকা, শুকনা ৯৫০-১০০০ টাকা, কাজললতা ভেজা ৮৮০-৯০০ টাকা, শুকনা ১০০০-১০৫০ টাকা, সুবললতা ভেজা ৮৫০-৮৭০ টাকা, শুকনা ৯৫০-১০০০ টাকা কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে গাড়িভাড়া, লোড-আনলোডসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে চাল উ‍ৎপাদন খরচ।

এসব ব্যবসায়ী জানান, নতুন ধানের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সে কারণে চালের দামও বাড়ছে। পুরোদমে বাজারে নতুন ধান এলে তখন কিছু একটা হতে পারে। তবে আপ‍াতত চালের দাম কমার কোন আশা দেখছেন না এসব ব্যবসায়ী।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় এ ব্যাপারে জানতে জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে ঢাকায় একটি জরুরি সভা থাকায় তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। পরে কথা হবে বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।   

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।