ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

জোয়ার ভাটার প্লাবনে নষ্ট হবে না ধান গাছ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৭
জোয়ার ভাটার প্লাবনে নষ্ট হবে না ধান গাছ জোয়ারের প্লাবনে টিকে থাকা ধানের বীজ

বরিশাল: অলবণাক্ত জোয়ার-ভাটার প্লাবনে আর নষ্ট হবে না ধানের গাছ। পাশাপাশি ৪ ফুট প্লাবনে তলিয়েও গেলেও তাতে কোন ক্ষতি হবে না। কারণ, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির উপযুক্ত নতুন ধানের চারা উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।

১০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে এ ধরনের দু’টি ধানের জাত, ব্রি ধান-৭৬ ও ব্রি ধান-৭৭ উদ্ভাবন করেছে বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।

এ ধান চাষ সম্প্রসারিত হলে বরিশালে খাদ্য উৎপাদন বাড়বে বলে দাবি কৃষি বিজ্ঞানীদের।

বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে নতুন উদ্ভাবিত সাদা মোটা ও দুধকুলম নামের স্থানীয় জাতের এ ধান দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির জন্য উপযুক্ত।

বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর তথ্য অনুযায়ী, এ ধরনের ধান চাষে হেক্টর প্রতি জমিতে লাগবে ২০ কেজি বীজ। আমন মৌসুমে ৪০ থেকে ৪৫ দিন বয়সী দু’ফুট উচ্চতার এই চারা রোপনের ১২০ দিনের মধ্যেই কাটার উপযুক্ত হবে। এ সময় ক্ষেত একটানা ৫ দিন পানিতে ডুবে থাকলেও ধানের কোন ক্ষতি হবে না। এমনকি জোয়ার-ভাটার পানি এবং বন্যায় সাড়ে চার ফুট উচ্চতার ধানগাছ নুয়ে পড়বে না। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের থেকে ১ সপ্তাহ আগে এ ধান পেকে যাবে। এতে স্থানীয় অন্যান্য ধানের উৎপাদন থেকে প্রায় ১ টন বেশি উৎপাদন হবে।

এই নতুন উদ্ভাবিত ধান বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায় পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে সফলতা এসেছে। আর তাই এ বছর থেকে এই দুটি ধানের জাতের বীজ সংগ্রহ শেষে প্রথমবারের মতো কৃষকদের মধ্যে সরাসরি বিতরণ করবে বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হোসেইন জানান, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকরা জোয়ারের পানিতে ক্ষেত ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকেন। এতে এক থেকে দুইদিন পানির নিচে ধানের চারা থাকলে তা পচে যায়। তাই ধান ঘরে তুলতে না পেরে কৃষরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কৃষক ও দেশের স্বার্থেও এ কথা চিন্তা করে গত ৮/১০ বছর ধরে গবেষণা করে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির উপযুক্ত ধানের চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই ধানের চারা এ বছর থেকে প্রথমবারের মতো কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবে বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

তবে এ ধান গাছ লবণপানি সহিষ্ণু নয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, লবণাক্ত এলাকা অর্থাৎ লবণ পানির এলাকার জন্য এরই মধ্যে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ব্রি ধান ৬৭ জাত উদ্ভাবন করেছে।

তিনি জানান, আবার রোপা আমন মৌসুমে চাষাবাদ উপযোগী বন্যা সহনশীলসহ উচ্চ ফলনশীল ধানের নতুন জাত ব্রি ধান ৭৯ উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। যা এ বছর এ অঞ্চলে রিলিজ হবে।

নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৭৯ এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো- এটি ১৮ থেকে ২১ দিন বন্যার পানিতে ডুবে থাকলেও ফলনের তেমন ক্ষতি হয় না। আর এতো দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে না পড়লে স্বাভাবিক অবস্থায় এটি হেক্টর প্রতি ৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এর জীবনকাল আকস্মিক বন্যা সহনশীল কয়েকবছর পূর্বে রিলিজ হওয়া অন্য একটি জাত ব্রি ধান ৫২ এর চেয়ে পাঁচ দিন আগাম।  

বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন) ড. আলমগীর হোসেন জানান, আমন মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়সী দুই ফুট উচ্চতার এ ধান চারা রোপণ করার ১৫০ দিনের মধ্যে কাটার উপযুক্ত হবে। যেসময় ধান কাটার উপযুক্ত হবে তখন এর উচ্চতা হবে সাড়ে চার ফুট।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৭
এমএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।