ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ইংল্যান্ডে গেলো রাজশাহীর ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ আম

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
ইংল্যান্ডে গেলো রাজশাহীর ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ আম রাজশাহীর ফ্রুট ব্যাগিং করা আম

রাজশাহী: রাজশাহী থেকে প্রথমবারের মতো ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ প্রযুক্তির আম গেলো ইউরোপের অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র ইংল্যান্ডের উদ্দেশে। এর মধ্যে দিয়েই আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহীর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হলো। বিশেষ পদ্ধতির এই আম কৃষকের এক বছরের কষ্টার্জিত ফসল। তাই আম রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের রঙিন স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় আমচাষিরা।

রোববার (১১ জুন) সকাল থেকে ফ্রুট ব্যাগিং করা আম ভাঙা হয় বাগান থেকে। এই উপলক্ষে রাজশাহীর তেরোখাদিয়া এলাকার বিশাল আম বাগানে উৎসবের আমেজ দেখা দেয়।

স্থানীয় আমচাষি, রপ্তানিকারক, কৃষিবিদ সবাই বাগানে জড়ো হন। এর পর শুরু হয় প্যাকেটিং করার জন্য আম বাছাইয়ের কাজ।  

আম ভাঙার পর কৃষি কর্মকর্তারা একটি একটি করে প্রতিটি আমই পরখ করে দেখেন। কেবলমাত্র রপ্তানি উপযোগী আম বছাই করা হয়। বাকিগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য আলাদা করে দেন তারা।

এর পর খুবই সাবধানে আম থেকে বোটা আলাদা করা হয়। যেন তার কষও আমের গায়ে লাগতে না পারে। ভালোভাবে মুছে রসে ভরা সুদর্শনীয় রঙিন টসটসে আমগুলোর নিচে ও উপরে কাগজের কুচি দেওয়া হয়। পরে আমগুলো থরে থরে সাজিয়ে ট্রেযুক্ত প্যাকেটের মুখটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রাজশাহীর ফ্রুট ব্যাগিং করা আম
রাজশাহী রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী থেকে এবারই প্রথম ফ্রুট ব্যাগিং করা আম ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে পাঠানো হচ্ছে। এটি ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ নগর ও অর্থনৈতিক জোন। মূলত স্থানীয় রপ্তানিকারক আল-আমিন হোলসেল লিমিটেডের কাছে তারা আমগুলো দিয়ে দিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমেই কাভার্ডভ্যানে ঢাকা হয়ে ফ্রুট ব্যাগিং করা এই আমগুলো ইংল্যান্ডের উদ্দেশে কার্গো প্লেনে উঠবে। বছাইয়ের পর স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র দিলেও এর মাঝখানে আরও একবার আমগুলো পরীক্ষা করা হবে ঢাকায়।

প্রথমবার কী পরিমাণ আম যাচ্ছে প্রশ্নে আনোয়ারুল হক বলেন, তাদের সোসাইটির মধ্যে রপ্তানির জন্য প্রথমেই পবা, বোয়ালিয়া ও মতিহারের কিছু বাগান নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। ওই বাগানগুলো থেকে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদন করা সুমিষ্ট আম বাছাই করে ৮০ টাকা কেজি দরে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আল-আমিন হোলসেল লিমিটেডকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথবারের মতো রাজশাহী থেকে এবার সাড়ে ৩ মেট্রিক টন আম ইংল্যান্ডের উদ্দেশে পাঠানো হলো। তারা নিজ খরচে বাগান থেকে কাভার্ডভ্যানে করে এই আম অতি যত্নসহকারে ঢাকায় নিয়ে যাবেন। পরে তারাই আম পাঠাবেন।
ব্যাগি থেকে আম নামাচ্ছেন চাষি
আজ পাঠানো আমগুলো সবই ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর)। প্রথম চালানে সফলতা আসলে পর্যায়ক্রমে আরও আম পাঠানো হবে। আজ রাজশাহীর পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুর-এ-মাওলা, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক আমগুলো পরীক্ষা করে প্রত্যয়নপত্র দেন, বলেন আনোয়ারুল হক।

রাজশাহীর পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুর-এ-মাওলা বাংলানিউজকে বলেন, গাছ থেকে নামানোর পর তারা আমগুলো পরখ করে দেখেন। মূলত ফ্রুট ব্যাগিং করা আমগুলো কোনো ধরনের কীটনাশক স্প্রে ছাড়া বিষমুক্ত। এই আমের গুণগতমান অনেক ভালো এবং সুস্বাদু। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এর পরও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে বলে বাড়তি সাবধানতা হিসেবে ফ্রুট ব্যাগিং করা আম নামানোর পর তারা বাগানে যান। এ সময় আমগুলো পরখ করে দেখেন। যেগুলো রপ্তানি উপযোগী সেগুলো বছাই করে অন্যগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য আলাদা করে দেন তারা।
রপ্তানির জন্য প্যাকিং করা হচ্ছে আম
এরপরও রপ্তানিকারকের মাধ্যমে ঢাকায় যাওয়ার পর কৃষি অধিদফতরের অধীনে থাকা উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ল্যাবে এই আমগুলো আবারও পরীক্ষা করা হবে। সেখানে প্রথমে দেখা হবে আমগুলো পাকা কি না এবং পোকা-রোগমুক্ত ও পচা কি না। এর পর সেখানকার ল্যাবেই আমগুলোর ফরমালিন, ব্রিক্স, পি-এইচসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রাসায়নিক পরীক্ষা করা হবে। তারপরই মিলবে চূড়ান্ত প্রত্যায়ন। খুব কম সময়েই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হয়। এজন্য রপ্তানিকারকদের সমস্যা হয় না। দেশের সুনাম রক্ষার স্বার্থে সরকারি নির্দেশে এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আম রপ্তানি করতে হয় বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুর-এ-মাওলা বলেন, আম গবেষণা কেন্দ্রে দু’বছর ধরে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিতে প্রায় ১৮ জাতের আমের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। শেষে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় দুই বছর আগে আমচাষিদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ৪০-৫০ দিন ব্যাগিং করার পর তার গাছ থেকে ভাঙা হয়। এই আম সংগ্রহের পর ১০-১৫ দিন পর্যন্ত অনায়েসেই সংরক্ষণ করে তা খাওয়া যায়। এখানে আম ভাঙার পর দ্রুত নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

এর আগে গত দুই বছর থেকে ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফ্রুট ব্যাগিং করা আম। গত বছরের ৮ জুন ৩ মেট্রিক টন ক্ষিরসাপাত আম রপ্তানির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বছরে পা রাখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। চলতি বছরও এই প্রযুক্তিতে উৎপাদিত আম মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। তবে রাজশাহী থেকে এবারই প্রথম পাঠানো হলো ফ্রুট ব্যাগিং করা আম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।