ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সবজি চাষে দিনমজুর স্বামী-স্ত্রী এখন লাখপতি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৭
সবজি চাষে দিনমজুর স্বামী-স্ত্রী এখন লাখপতি! সবজি চাষে দিনমজুর স্বামী-স্ত্রী এখন লাখপতি,ছবি: বাংলানিউজ

কুড়িগ্রাম: দিনমজুর সিদ্দিক-কবিনা দম্পতি। সবজি চাষ করে নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে পরিবারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। মাত্র ৫ শতক জমিতে বেগুন, মরিচ, কচুসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করার পর তা বদলে দিয়েছে তাদের জীবনচিত্র।

অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে একসময় স্ত্রী-সন্তানের মুখে দু-বেলা দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে হতো। আর এখন স্বচ্ছলতার সঙ্গে নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন।

পাশাপাশি আরো ১০টি দিনমজুর পরিবারের অন্নের যোগানোর ব্যবস্থা করেছেন।

কুড়িগ্রাম জেলাশহর থেকে ৪২ কিলোমিটার উত্তরে ফুলবাড়ি উপজেলার নাওয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী কুরুষা-ফেরুষা গ্রামের সিদ্দিক মিয়া (৫০) ও কবিনা বেগম (৪০) রীতিমতো সবজিবিপ্লব ঘটিয়েছেন।

সবজি চাষ করে যে আয় তা দিয়েই পাঁচ ছেলে ও এক মেয়েসহ ১৬ সদস্যের পরিবারের অন্যসব খরচ মিটিয়ে সন্তানদের পড়া-লেখার খরচ মেটাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। সবজি চাষে দিনমজুর স্বামী-স্ত্রী এখন লাখপতি,ছবি: বাংলানিউজতার সবজিখেত দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন কাছের দূরের অনেকে। তাই নিজগ্রাম কুরুষা-ফেরুষা ছাড়াও গোরকমণ্ডল, চরগোড়কমণ্ডল, বালাটারী গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতেও এখন সবুজের সমারহ। কেউ ফসল তুলছেন, কেউবা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সবজিখেতে প্রতিদিন দিনমজুরির কাজ করা আক্কাস আলী (৪৫), হেমন্ত চন্দ্র রায় (২৮), নাজমা বেগম (৩৫) বাংলানিউজকে জানালেন, সময়মত যত্ন নেয়ায় সিদ্দিক মিয়ার খেতের সবজির চাহিদা প্রচুর। কাজের জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে না, বাড়িতে থেকেই কর্মসংস্থান হয়ে যাচ্ছে। তার জমিতে কাজ করে নিজেদের পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পারছি।

সবজিচাষির স্ত্রী কবিনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, ত্রিশ বছর আগে দিনমজুর শ্বশুরের মৃত্যুর পর কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাই মিললেও ছিল না কোনও আবাদি জমি। দিনমজুরির পাশাপাশি মাত্র পনের টাকা পুঁজি দিয়ে কাঁচা মরিচের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর নানা ঘাদপ্রতিঘাত। এই করে করে সংসার চালিয়েও কিছু টাকা জমা হতো। এই জমানো টাকা দিয়ে পাঁচ বিঘা জমি ক্রয় করে শুরু করেন সবজি চাষ। এরপরই বদলাতে শুরু করে ভাগ্য।

নিজের জমির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী আরও চার বিঘা জমি বন্ধক ও ছয় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটিয়েছেন। সবজি চাষে দিনমজুর স্বামী-স্ত্রী এখন লাখপতি,ছবি: বাংলানিউজসবজিচাষি সিদ্দিক মিয়া বাংলানিউজকে জানান, দুই বিঘা জমিতে বেগুন, এক বিঘায় কাঁচা মরিচ, ১৩ বিঘায় কচু লাগানো আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেগুন, মরিচ ও কচুর বাম্পার ফলন হয়েছে।

প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ মন বেগুন বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে বেগুন চাষে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। খচর বাদ দিলে বিঘায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়। প্রতিমণ বিক্রি হয় ৫শ থেকে ৬শ টাকায়।

মরিচ এক বিঘা জমিতে খরচ ২০ হাজার টাকা। সপ্তাহে ৬/৭ মন মরিচ তুলে বিক্রি হয় প্রতিমণ এক হাজার টাকা দরে। কচু প্রতি বিঘায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় উৎপাদিত কচু বিক্রি হবে ৩০/৩৫ হাজার টাকায়।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুসাব্বের আলী মুসা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি সবজি উৎপাদনের ভান্ডার। এখানে অনেক কৃষক বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সিদ্দিক মিয়ার মতো সবজি চাষ করে অনেক দরিদ্র পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষাবাদ হয়েছে। সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সিদ্দিক মিয়া তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে। তাকে দেখে এলাকার অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৭
এফইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।