ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বিশ্বের ৭ দেশে যাচ্ছে বরুড়ার লতি

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৭
বিশ্বের ৭ দেশে যাচ্ছে বরুড়ার লতি বরুড়ার লতির হাট- ছবি: বাংলানিউজ

কুমিল্লা: কুমিল্লার ঐতিহাসিক লালমাই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বরুড়া উপজেলার অবস্থান। জেলা সদর থেকে ২৫ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত। কচুর লতি চাষের জন্য বিখ্যাত এ উপজেলা।

এখানকার লতি দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের প্রায় সাতটি দেশে।

এ উপজেলার একটি বাজারের নাম কাদবা।

সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত লতি নিয়ে চাষীরা ভিড় করেন এই কাদবা বাজারে। এছাড়া উপজেলার মন্তুর বাজার, শরাফতি পদুয়ার বাজার, বাতাইছরি পুরান বাজার, নতুন বাজার, শিকারপুর, জালগাও, দরগারনামা, পদুয়া, ভবানীপুর, মুগুজি, নিচিন্তপুর, চৌমুহনী, বরুড়া চান্দিনা রোডে অস্থায়ী সবজি বাজারগুলোতে লতি বিক্রি হয়।

এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা তা কিনে পাঠাচ্ছেন ঢাকা-চট্টগ্রামে। সেখান থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় প্যাকেট করে রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রেতারাও বাজার দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন এর উৎপাদনও বাড়ছে ব্যাপকভাবে।

তবে কালের পরিক্রমায় কাদবা বাজারটি এখন জেলার বৃহৎ লতির বাজার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সাপ্তাহিক হাটের দু’দিন বরুড়ার শরাফতি, মগুজি, কসমি, নিশ্চিন্তপুর, পুরাতন কাদবা, বরাইপুর, যশপুর, পেনুয়া, পাক্কামোড়া, লইপুরা, করিয়াগ্রাম, হুরুয়া, পাঠানপাড়া, বড়লক্ষ্মীপুর, ঝাঁলগাও, নয়নতলা, পোনতলা, বাতাইছড়ি পুরান বাজার, খোশবাস, সদর দক্ষিণের বাগমারা, ভূশ্চি, লালমাই, বুড়িচং এর নিমসার, সদর উপজেলার কালিরবাজার, কমলাপুর, মনসাশন, হাতিগাড়া, কৃষ্ণপুর, জাঙ্গালীয়া, চান্দিনার পিহর, মাইজখার, ছায়কোট, রামমোহনসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত কৃষক সপ্তাহের উল্লেখিত দু’দিন তাদের উৎপাদিত লতি নিয়ে হাজির হচ্ছেন বাজারে।
বরুড়ার লতি চাষ- ছবি: বাংলানিউজস্থানীয় সূত্র জানায়, এ উপজেলার হাজার হাজার পরিবার এ লতি চাষে জড়িত। লতি চাষে সাফল্যের মুখ দেখেছে উপজেলার যুব সমাজ। হাজার হাজার যুবক এ পেশায়
জড়িত।

বাতাইছড়ি বাজারের লতি চাষী যুবক ইব্রাহিম জানান, বেকার জীবন শেষ। আমি এখন বাবার সঙ্গে লতি চাষ করি। বাজারে বিক্রি করি। আর্থিক অনটনও শেষ। বেশ
ভালো আছি।

কৃষক আরিফ মিয়া জানান, লতি চাষে সময় ও খরচ দুটোই কম। তাই আমরা লতি চাষে উৎসাহী। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এ লতি চাষ করে আসছি। সপ্তাহের দু’দিন বরুড়ার বিভিন্ন
গ্রাম থেকে কৃষকরা তাদের চাষ করা জমিতে উৎপাদিত লতি নিয়ে বাজারে আসেন। আমাদের থেকে লতি কিনে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ট্রাকযোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান।

পাইকারি ক্রেতা আবুল কাসেম জানান, বাতাইছড়ি পুরাতন বাজার থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০/৬০ টনের বেশি লতি ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। এখান থেকে উৎপাদিত লতি বছর জুড়েই সৌদিআরব, কাতার, ওমান, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া যাচ্ছে। আর এর মাধ্যমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।

লতি চাষ এখন বরুড়া উপজেলার সফল ব্যবসা। এর মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচানোর পাশাপাশি বেকার যুবকরা আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হচ্ছে। সর্বোপরি লতি চাষে বিপ্লব ঘটেছে এ উপজেলায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৭
বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।