ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

মরিচের ঝালে কৃষকের হাসি, সংশ্লিষ্টদের ভাগ্য ফিরছে

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৭
মরিচের ঝালে কৃষকের হাসি, সংশ্লিষ্টদের ভাগ্য ফিরছে মরিচের ঝালে কৃষকের হাসি, সংশ্লিষ্টদের ভাগ্য ফিরছে

লালমনিরহাট: গত সপ্তাহে প্রতি মণ কাঁচা মরিচ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। চলতি সপ্তাহে দর চলছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। কাঁচা মরিচের ঝাল বেড়ে যাওয়ায় হাসি ফুটেছে লালমনিরহাটের মরিচচাষিদের।

এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় মরিচের ফলনও হয়েছে বাম্পার। বাজারে চাহিদা প্রচুর থাকায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা, পুষিয়ে নিচ্ছেন গত দুই বছরের ক্ষতিও।

 

মরিচ তুলে ভাগ্য ফেরাচ্ছেন দিনমজুর কৃষিশ্রমিক ও নারীরা, বিক্রি করে লাভ করছেন খুচরা-পাইকারি ব্যবসায়ীরা।  

মরিচ ও সবজি এলাকা খ্যাত লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি  গ্রাম। গ্রামটির মাঠের পর মাঠজুড়ে মরিচ আর সবজির ক্ষেত।  

সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানান, মরিচ আর সবজি চাষেই কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আয় বেড়েছে এ জনপদের। ভাগ্যের পরিবর্তন করে নিয়েছেন অনেকেই। কিছুদিন আগেও যাদের পেটের ভাত নিয়ে চিন্তা ছিল, তাদেরও জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে।

বড় কমলাবাড়ি গ্রামের মরিচচাষি হেকমত আলী জানান, গত বছর ৭০ শতাংশ জমিতে মরিচের 
চাষ করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত দুই বছর টানা বৃষ্টিতে অকালে গাছ মরে যাওয়ায় কিছুটা লোকসান গুণতে হয়েছে। এ বছর মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে ১০ হাজার টাকা খরচে চাষ করে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। ১০ দিন পর পর ৪/৫ মণ মরিচ তুলতে পারেন তিনি।  

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও এক মাস তুলতে পারবেন। ওই জমি থেকে আরও ৫০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রির আশা হেকমতের।  

বড় কমলাবাড়ি পশ্চিম পাড়ার চাষি আব্দুর রহিম জানান, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে পানি জমে না- এমন জমিতে মরিচের চারা রোপন করতে হয়। এরপর সার-কীটনাশক দিয়ে পরিচর্যা করলে লাভবান হওয়া যায়। ১০/১২ দিন পর পর জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত, এমনকি বৃষ্টি কম হলে ভাদ্র মাসেও মরিচ সংগ্রহ করা যায়।


তিনি জানান, এ বছর চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিতে ঝামেলা নেই, মুনাফাও অনেক বেশি। এলাকার ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকেই মরিচ কিনে সারা দেশে বিক্রি করছেন। এমন দাম থাকলে তার ৪০ শতাংশ জমি থেকে লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রির আশা করছেন আব্দুর রহিম।


মরিচ তোলায় ব্যস্ত এখন দিনমজুর কৃষি শ্রমিকরাও। গাছ থেকে এক মণ মরিচ তুলে মজুরি মিলছে ২০০ টাকা। এ কাজে বেশি সম্পৃক্ত হচ্ছেন গৃহবধূরা। সংসারের কাজ শেষে বাড়তি আয় করতে মরিচ ক্ষেতে ছুটছেন তারা।

মৌসুমি শ্রমিক জরিনা ও সাহারা বেগম জানান, সংসারের কাজের পরও প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ মরিচ তোলা যায়।  


স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সারাদিন গ্রামে গ্রামে মরিচ কিনে ট্রাকে ভরিয়ে রাতে পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন জেলায়। পরদিন সকালে তা বিক্রি করে ট্রাকেই টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।


স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সারাদিন ক্ষেত থেকে মরিচ কিনে রাতে ট্রাকে কুমিল্লা শহরে পাঠান। পরদিন সকালে বিক্রি হয়ে ট্রাকচালকের মাধ্যমেই চলে আসে টাকা। কোনো ঝামেলা ছাড়াই গত কয়েক বছর ধরে চলছে তার এ ব্যবসা।


আদিতমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বাংলানিউজকে জানান, এ বছর উপজেলার ১২০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারদরও ভালো থাকায় বেশ মুনাফা পাচ্ছেন চাষিরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।