ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

আমন চারার লাগামহীন দামে হতাশায় সিংড়ার চাষিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
আমন চারার লাগামহীন দামে হতাশায় সিংড়ার চাষিরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোর: আমন মৌসুমের শেষ সময়ে দ্বিতীয় দফায় ধানের আবাদে নেমেছেন চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার বন্যার্ত চাষিরা। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় সদ্য রোপণ করা ধানের চারা পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা, ভেস্তে যায় স্বপ্ন। পানি নেমে জমি জেগে ওঠায় ফের চারা রোপণ করছেন, ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নও দেখছেন নতুনভাবে।

তবে চাহিদা মাফিক ধানের চারা মিলছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তারও চড়ামূল্য।

তাতে একদিকে চারার সংকট, অন্যদিকে লাগামহীন দামে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।

কৃষি অফিস জানিয়েছে, প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান গ্রাস করে এবারের সর্বনাশী বন্যা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ, ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান মাঝারি ও ২ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমির ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৪০ হাজার কৃষক। এখন জেগে ওঠা ২ হাজার হেক্টর জমিতে ফের ফসল ফলাতে তারাই শুরু করেছেন জমি প্রস্তুতিসহ রোপা আমন ধানের চারা সংগ্রহের কাজ। কিছু কিছু জায়গায় চারা রোপণও চলছে।

ফলন ভালো হলে বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপজেলার জামতলি হাট, রামনগর, চৌগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে গেছে, বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর থেকেই কৃষকদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন হাটে-বাজারেও পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে রোপা আমনের চারা। তবে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও ধানের ভালো দাম পাওয়ার আশায় বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও শেরপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানি হওয়া এসব চারা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা।

কিছু কিছু এলাকায় নিজেরাই চারা তৈরি করেছেন কৃষকরা। তবে তাদের সংখ্যা খুব সীমিত বলে দাবি কৃষি বিভাগের।

কৃষকরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে বন্যার পানি কমতে থাকায় নিমজ্জিত কিছু কিছু এলাকার ফসলি জমি জেগে উঠেছে। এ রকম প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে ব্রি জাত-৩৪ ও জিরাসাইল জাতের ধানের চারা রোপণ করছেন তারা।

প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১০০ আঁটি বা সোয়া পোন করে ধানের চারার প্রয়োজন হচ্ছে। হাটে-বাজারে চারা বিক্রি হচ্ছে পোনপ্রতি (৪০ গণ্ডায় আঁটি) ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮০ আঁটি ধানের চারার মূল্য ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।

এবার চারার দাম অনেক বেশি বলেও জানান কৃষকরা। তারা বলছেন, বিঘাপ্রতি চারা কিনতে খরচ হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকা। এ দামে চারা কিনলে বন্যার ক্ষতিপূরণ হবে না। এরপরও একমাত্র কৃষির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় নির্ঘাত ক্ষতি জেনেও ফসল ফলাতে হবে। তা না হলে ছেলে-মেয়ে, পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।

রামনগর গ্রামের কৃষক মাসুদ রানা জানান, তিনি এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছিলেন। এর মধ্যে ৬ বিঘা জমির ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। তিন বিঘা জমির পানি নেমে গেছে। চারা সংগ্রহ করে সেখানে ফের চাষাবাদ করছেন।

ইটালি ইউনিয়নের কালাইকুড়ি গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, বন্যায় তার ৩০ বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। মাত্র ১০ বিঘা জমি জেগে ওঠায় সেখানে নতুন করে চারা রোপণ করছেন। কিন্তু চারার দাম আকাশছোঁয়া।

রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রামের কৃষক প্রভাত চন্দ্র জানান, তার ৩৬ বিঘা জমির ধান তলিয়ে চরম ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নামতে শুরু করায় এর মধ্যে ২০ বিঘার মতো জমি জেগে উঠেছে। সেখানে নতুন করে চারা রোপণ শুরু করেছেন। এজন্য বগুড়ার নন্দীগ্রাম এলাকা থেকে বেশি দামে চারা সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

মানিকদিঘি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ও কালাইকুড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুস সবুর জানান, চারার দাম বেশি হলেও প্রয়োজনে তাদের কিনতেই হচ্ছে। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) জামতলি বাজার থেকে তিন হাজার টাকা পোন দরে কিনেছেন। বিঘাপ্রতি চারা বাবদই খরচ হচ্ছে ৩/৪ হাজার টাকা, এর ওপরে দেখা দিয়েছে সংকট।

নন্দিগ্রাম থেকে আসা চারা বিক্রেতা সেকেন্দার আলী, আব্বাস উদ্দিন, শহিদুল ইসলামসহ আরো অনেকে জানান, তাদের এলাকায় চারা রোপণ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।   অবশিষ্ট চারাগুলোই তারা চলনবিলাঞ্চলের বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি করছেন। চারার দাম বেশি। আর কয়েকদিন পর আরো বেশি দামেও হয়তো মিলবে না। কারণ, তাদের এলাকায়ও সংকট রয়েছে।

প্রতি পোন চারা সময়ভেদে  আড়াই হাজার টাকা থেকে শুরু করে চার হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তারা।


চারা সংকটের কথা স্বীকার করে সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোপা আমনের চারা রোপণের সময় রয়েছে। তাই উপজেলার বানভাসি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে তাদের জেগে ওঠা জমিতে নতুন করে চারা রোপণ করছেন’।

‘কিন্তু চারা সংকটে হতাশায় আছেন তারা। এরপরও বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা এনে চাষাবাদ শুরু করেছেন। প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে নতুন করে রোপা আমনের আবাদ হচ্ছে এ উপজেলায়। কৃষি বিভাগ থেকে এজন্য কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে’।

‘আশা করি, এ ফসল আবাদে চলনবিলাঞ্চলের কৃষকরা কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন’- বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।