ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

মাটির উর্বরতার উন্নয়নে সয়াবিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
মাটির উর্বরতার উন্নয়নে সয়াবিন সয়াবিন ক্ষেত।

দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে ও দ্রুত আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকরা একই জমিতে বছরে দুই বা তিনটি ফসল আবাদ করে। এতে জমির উর্বরতা শক্তি ক্রমাগত হ্রাস পায়। সীমিত জমি থেকে অধিক উৎপাদনের প্রয়োজনে শস্য নিবিড়করণ, শস্য বহুমুখীকরণ ইত্যাদি বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।

অধিক ফলন পাবার আশায় কৃষক সুষম সারের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে এক জাতীয় রাসায়নিক সার (ইউরিয়া) বেশী ব্যবহার করায় জমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতায় একটি ভারসাম্যহীন অবস্থা বিরাজ করছে। সার ব্যবহারে কৃষকের শতভাগ আগ্রহ সারের উচ্চ মূল্য বৃদ্ধির কাছে বার বার হেরে যাচ্ছে।

ষাট বা সত্তরের দশকে কৃষক জমি চাষের সময় শুধু নিজের খামারজাত সার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতো।

ঘাতক ব্যাধি নিরাময়ে সয়াবিনের বিস্ময়কর প্রভাব

বর্তমান সময়ে রাসায়নিক সারের সাথে জৈব সার ব্যবহার করার বিষয়ে কৃষকের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দিন দিন জৈব সারের উৎস ও প্রাপ্তি কমে আসছে। অথচ এই জৈব পদার্থকেই “মাটির প্রাণ” বলা হয়। জৈব পদার্থ না থাকলে মাটি অনুর্বর হয়। শুধু রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে কিছুকাল পরে আর ভাল ফলন পাওয়া যায় না। শস্য নিবিড়করণের ফলে কৃষকরা জমিতে ২/৩ ফসলের মাঝে একটি সবুজ সার সৃষ্টিকারী ফসলের চাষ করার সময় পাচ্ছে না।

গবেষণায় দেখা যায়, সবুজ সার ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের চেয়ে ধানের ফলন ১২-১৫% বেশী পাওয়া যায়। সবজি চাষের বেলায় রাসায়নিক সারের সাথে জৈব সারের ব্যবহারের ফলে ফলন ৪২-৫৬% বৃদ্ধি পেয়েছে।

সয়াবিন ক্ষেত।  তাই অধিক ফলন নিশ্চিত করতে মাটির স্বাস্থ্যের প্রতি নজর  রাখতে হবে। আদর্শ কৃষি জমিতে ৫% জৈব পদার্থ থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ সংকট মাত্রার (১.৫%) নিচে বিরাজ করছে।

কাজেই, মৃত্তিকা জৈব পদার্থ ব্যবস্থাপনায় কৃষককূলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতন হওয়া অত্যাবশ্যক। বিগত কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার শস্য পরিক্রমায় রবি ফসল হিসেবে সয়াবিন একক ও অনন্য সাধারণ ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

সয়াবিন চাষিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সয়াবিন চাষে ঝুঁকি ও খরচ বাদামের তুলনায় অনেক কম, লাভ অনেক বেশী। সয়াবিন উত্তোলনের পর ওই জমিতে আউশ ধানের ফলন খুব ভাল হয়। কেন আউশ ধানের ফলন ভাল হয় এর বৈজ্ঞানিক কারণ নিহিত রয়েছে সয়াবিনের বহুমুখী মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির বিভিন্ন দক্ষতা ও কলাকৌশলের উপর। নিচে সয়াবিন যেভাবে মাটির উর্বরতা বাড়ায় তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো :

মাটিতে নাইট্রোজেন সংযোজনের মাধ্যমে  
সয়াবিন একটি উত্তম বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী লিগুম ফসল হিসেবে মাটিতে নাইট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি আবাদ মৌসুমে সয়াবিন মাটিতে হেক্টর প্রতি ২৫০-২৭৭ কেজি নাইট্রোজেন সংযোজন করতে পারে, যা ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেনের শতকরা প্রায় ৮০-৮৫ ভাগ। সয়াবিন গাছের শিকড়ে ফুলন্ত অবস্থায় ১২-৪৩ টি ধুসর বর্ণের গুটি থাকে। এ গুটিগুলোতে বায়োক্যামিকেল প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন আবদ্ধ হয়, যা সৃষ্টির এক রহস্যজনক অবদান। গুটিগুলো মাটিতে নাইট্রোজেন অবমুক্ত করার পর আপনাআপনি শুষ্ক হয়ে শিকড়সহ জৈব পদার্থ হিসেবে মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
   
সয়াবিন ক্ষেত।  পাতাসহ অন্যান্য দৈহিক অংশ পঁচে
লিগুম ফসলের মধ্যে সয়াবিন একমাত্র ফসল যার জীবনকালের ৬০ দিন পর হতে দৈহিক কাণ্ড থেকে পাতাগুলো বীজ পরিপক্ক  হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত ঝরতে থাকে। সয়াবিন গাছে ৫-৭ টি শাখায় সর্বোচ্চ ৭৫-৮২ টি পাতা থাকে। এ হিসেবে পাতাসহ অন্যান্য দৈহিক অংশ মিলিয়ে সয়াবিন মাটিতে প্রায় ৭-৮ টন বায়োমাস সংযুক্ত করে জৈব পদার্থ বৃদ্ধি করে।
 
কার্বন-নাইট্রোজেন অনুপাত ব্যাল্যান্স করার মাধ্যমে
সয়াবিন বায়োমাসের কার্বন-নাইট্রোজেন অনুপাত ১০: ১। পাতা ও অন্যান্য দৈহিক অংশ পড়ে মাটির উপর একটি স্তর সৃষ্টি হয়। কার্বন-নাইট্রোজেন অনুপাত কম হওয়াতে এ বায়োমাস অল্প সময়ের মধ্যে পঁচে গলে মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে। এর ফলে মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অনেক উন্নত হয়। মাটিতে ক্ষুদ্র অনুজীবের কার্যাবলী বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। মাটি হয় পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ। এভাবে মাটি পরবর্তী ফসলে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ নিশ্চিত করে।
 
লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বিএআরআই, নোয়াখালী।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।