ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

জুমের ভালো ফলনে খুশি জুমিয়ারা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৭
জুমের ভালো ফলনে খুশি জুমিয়ারা উৎফুল্ল মনে পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত জুম্ম নারী-পুরুষেরা। ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: ‘হিল্লো মিলেবো জুমত যায় দে, জুমত যায় দে, যাদে যাদে পধত্তুন পিছ্যা ফিরি রিনি চায়, শস্য ফুলুন দেঘিনে বুক্কো তার জুড়ায়... (পাহাড়ি মেয়েটি জুমে যায় রে, যেতে যেতে পথে পথে পিছন ফিরে চায়, পাকা শস্য দেখে তার বুকটা জুড়ায়...)’।

সারা বছরের পরিশ্রম শেষে জুমক্ষেতের পাকা ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে জুমঘরের মাচায় বসে এ গানটি গেয়েই মনের আনন্দ প্রকাশ করেন পাহাড়ি জুমিয়ারা। ফসল কাটতে যাওয়া তরুণীরাও এতে অনুপ্রাণিত হন।

জুমে বীজ বপনের পর পাঁচমাসের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ শেষে উৎপাদিত ফসল দেখে হাসি ফুটে ওঠে জুমচাষিদের মুখে। তাদের ঘরে ঘরে চলে আনন্দের নবান্ন উৎসব।

উপযুক্ত বৃষ্টিপাত ও ইঁদুরের উৎপাত কমে যাওয়ায় এ বছর জুমের ভালো ফলন হয়েছে। সোনালী ফসল ঘরে তুলতে পেরে অনেক খুশি পাহাড়িরা। উৎফুল্ল মনে পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত জুম্ম নারী-পুরুষেরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাহাড়ের তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের জুমক্ষেতে চলছে পাকা ধান কাটা। ধুম পড়েছে মারফা (পাহাড়ি শশা), ছিনারগুলা (পাহাড়ি মিষ্টিফল), বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাকরোল, কুমড়াসহ ইত্যাদি ফসল তোলাও।

এরপরে ঘরে উঠবে তিল, যব এবং সবশেষে তোলা হবে তুলা।

পাহাড়ি জুমচাষিরা জানান, পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল পরিষ্কার করে করে শুকানোর পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুমক্ষেত প্রস্তুত করেন তারা। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে ধারালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, তুলা, তিল, কাউন, ভুট্টা, ফুটি চিনার, যব ইত্যাদির বীজ বপন করেন। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জুমের ফসল পাওয়া শুরু হয়। প্রথমে ঘরে ওঠে মারফা (পাহাড়ি শশা), কাঁচা মরিচ, চিনার ও ভুট্টা। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সবশেষে তুলা, তিল, যব ঘরে তোলা হয় কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে।

রাঙামাটি সদর উপজেলার বরাদম এলাকার অমর চাঁন চাকমা বলেন, ‘আমার জুমের ফসল ভালো হয়েছে। এ বছর জমি থেকে ৩০-৪০ মণ ধান পাবো। এতে করে আর্থিকভাবে লাভবান হবো’।

মগবান ইউনিয়নের বৌদ্ধ চাকমা তার জুমের ফসল কাটতে কাটতে হাস্যোজ্বল মুখে বলেন, ‘এবার প্রায় ৩০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি’।

গোলাছড়ি এলাকার নিহার রঞ্জন চাকমা জানিয়েছেন, দেড় একরের মতো জমিতে জুমচাষ করেছি। পাহাড় ধসে অনেক জমি নষ্ট হলেও বৃষ্টি হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। এ জুমে উৎপাদিত ধান দিয়ে আগামী ৭-৮ মাস পর্যন্ত আমার চলে যাবে। পাশাপাশি হলুদ রোপণ করেছি, যা থেকেও ভালো উপার্জন হবে।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, জুমের ফলন বেশি ও ভালো হয় বাঘাইছড়ি, বরকল ও বিলাইছড়ি উপজেলায়। এবার জেলার ৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হয়েছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আপ্রু মারমা বলেন, উপজেলার ২২৫ হেক্টর জমিতে জুমচাষ করে ৪৫০ মেট্রিকটন ফসল উৎপাদিত হয়েছে। এবার ফলন ভালো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।