ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

আমনের পোকা দমন করছে পার্চিং-আলোর ফাঁদ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
আমনের পোকা দমন করছে পার্চিং-আলোর ফাঁদ পোকার আক্রমণ ঠেকিয়ে বেশি ফলনের স্বপ্ন পূরণে তৎপর চাষিরা। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: কঠোর পরিশ্রমে দু’দফা বন্যার হাত থেকে আমন ধানের ক্ষেত রক্ষার পর এখন পোকার আক্রমণ ঠেকাতে তৎপর লালমনিরহাটের কৃষকেরা।

কীটনাশকে পোকা দমন করতে না পারলেও জীবন্ত পার্চিং, মৃত পার্চিং ও আলোর ফাঁদ পদ্ধতিতে সফলতা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আগাছা ও কঁচুরিপানা পরিষ্কার করে প্রয়োজনীয় সার ও পরিচর্যায় আমন ক্ষেত রক্ষা করতে সমর্থ হন জেলার হাজার হাজার কৃষক।

এখন পোকার আক্রমণ ঠেকাচ্ছেন তারা।

তবে কীটনাশকে পোকা মরছে না বলে দাবি কৃষকদের। তারা বলছেন, কীটনাশক স্প্রে করলে সাময়িকভাবে পোকা এক ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে চলে যায়। কীটনাশকের গন্ধ সরে গেলে আবারও পোকার আনাগোনা শুরু হয়।

আলোর ফাঁদে রাতেও মারা হচ্ছে ক্ষেতের পোকা।  ছবি: বাংলানিউজ এক্ষেত্রে পার্চিং ও আলোর ফাঁদ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে, যাতে পোকা সরানো নয়, মেরে ফেলে বা পাখিকে দিয়ে খাইয়ে সমূলে ধ্বংস করা যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জীবন্ত পার্চিং হিসেবে ক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় ধৈঞ্চা গাছ লাগিয়েছেন চাষিরা। এসব গাছে পাখি বসে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলছে। ধৈঞ্চার শিকড় নাইট্রোজেনের কাজও করছে। কেউ কেউ জমিতে পুঁতে দিয়েছেন বাঁশের কঞ্চি বা শুকনো গাছের ডালপালাও, যেন পাখি বসে পোকাগুলোকে খেয়ে ফেলতে পারে।

আলোর ফাঁদ পদ্ধতিতে রাতে ক্ষেতে আলো জ্বালিয়ে তার নিচে পাতিলে ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো পানি রেখেছেন চাষিরা। আলো পেয়ে পোকা-মাকড় উড়ে এসে পাতিলের পানিতে পড়ে মারা যাচ্ছে। এতে শনাক্তও করা যাচ্ছে যে, ওই এলাকায় কোন প্রজাতির পোকা আক্রমণ করেছে। পরে তা দমনে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আদিতমারী উপজেলার ভাদাই সজিব বাজারের কৃষক নওশের আলী, নজরুল ইসলাম ও তমেজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, জীবন্ত পার্চিংয়ের গাছে পাখি বসে তাদের আমন ক্ষেতের পোকাগুলোকে প্রতিনিয়ত খেয়ে ফেলছে। ফলে এখন পর্যন্ত পোকার আক্রমণ দেখা যায়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর জেলার ৫টি উপজেলায় ৮২ হাজার ২৫৯ হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছে ৮৪ হাজার ৭১০ হেক্টরে। ৯৮ শতাংশ আমন ক্ষেতেই পার্চিং করা হয়েছে।

আদিতমারী উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা এম এম জামান শাহীন বাংলানিউজকে জানান, পোকা দমনে পার্চিং ও আলোর ফাঁদ পদ্ধতিতে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উঠান বৈঠক করে সমন্বিত উদ্যোগের পরামর্শ ও লিফলেট দেওয়া হচ্ছে।

জীবন্ত পার্চিং, মৃত পার্চিং ও আলোর ফাঁদ পদ্ধতি প্রয়োগে সোনার ফসলে ভরে উঠছে আমন ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজকৃষকরা সজাগ ও সচেতন হওয়ায় পোকার আক্রমণ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।

ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষকরা এভাবে সজাগ ও সচেতন থাকলে আমন ক্ষেতে পোকা আক্রমণ করতে পারবে না বলে আশাবাদী লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধু ভূষণ রায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।