ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

গো-খাদ্যের সংকটে খড়ের ব্যবসা জমজমাট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
গো-খাদ্যের সংকটে খড়ের ব্যবসা জমজমাট মধুপুর পৌর শহরের খড়ের বাজারে জমজমাট বেচা-কেনা। ছবি: বাংলানিউজ

মধুপুর ( টাঙ্গাইল): টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ভাইঘাট চেরাভাঙ্গা ব্রিজ পাড়ের মামুন তার ৭টি গরুর খাদ্য যোগাড়ে বেশ বিপাকে পড়েছিলেন। খুঁজে খুঁজে ৬০/৭০ কিমি দূরে টাঙ্গাইল সদরের করটিয়ায় গিয়ে মোবারক হোসেনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকায় এক গাদি খড় কেনেন। তিনটি ট্রাকের ভাড়া ১২ হাজার টাকাসহ আরও ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে বাড়িতে এনেছেন ওই খড়।

গোপালপুর উপজেলার সাজনপুরের মিশ্রপটি গ্রামের শফিকুল ইসলাম আকন্দ তপনের খামারে রয়েছে ১০টি গরু। সেগুলোর জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৩০ হাজার টাকার খড় সংগ্রহে রেখেছেন তিনি।

দূর-দূরান্তের ক্রেতারা এসে তার ওই খড়ের গাদার দাম ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত হেঁকে যাচ্ছেন।

তবে সাধারণ যেসব কৃষক ও গরুর খামারি আগে থেকে খড় সংগ্রহে রাখেননি, এবারের অকাল বন্যা পরবর্তী এ সময়টায় তারাই পড়েছেন বিপাকে।

তারা বলছেন, এবার বেশ সংকট খড়ের, অন্য বছর আগাম ধান কাটায় তেমন অভাব পড়েনি। আনুমানিক এক মণ (৪০ কেজি) ওজনের প্রতি ভ্যান খড় কিনতে গুণতে হচ্ছে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা, কেজিপ্রতি যা ৩৭ টাকা থেকে ৬২ টাকা।

চলতি বছরের কয়েক দফার বন্যায় টাঙ্গাইলের মধুপুর, গোপালপুর, ধনবাড়ী ও তার আশপাশের এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রোপা ধান নষ্ট হয়ে গেছে, দেখা দিয়েছে সবুজ ঘাসের সংকটও।

কৃষকের জমানো খড়ও শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক জমি অনাবাদি থাকায় সামনে আরও ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। মধুপুর গড়াঞ্চলের আনারস, কলা, পেঁপে, হলুদ, আদা চাষেও খড় লাগে। সেজন্যও সংকট বাড়তে পারে। সংকটের আশঙ্কায় ওইসব চাষি ও অনেক খামারিও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাজারে পাওয়া খড় বেশি দাম দিয়ে কিনে গরুকে খাওয়ানোর পাশাপশি জমাও করে রাখছেন কৃষকেরা।

খড়ের এ সংকটে মহা বিপাকে পড়েছেন ছোট ও মাঝারি কৃষকেরা। তারা না পারছেন গরু পালতে, না পারছেন ছাড়তে।  

মধুপুর আদালতপাড়ার উন্নত জাতের গরুর খামারি শাহীনুর রহমান জানান, খড়ের দামের কারণে গরু পালনের ব্যয় বেড়ে গেছে। মধুপুরের আড়ালিয়া গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, খড়ের অভাবে গরুই বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।

মধুপুর পৌর শহরের ময়মনসিংহ সড়কের হাটখোলা নতুন বাজারের খড়ের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রেতা শাহাজাহান মিয়া মধ্যম মান ও পরিমাণের এক ভ্যান খড় ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করে ক্রেতার সঙ্গে পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন।

গোপালপুরের মিজান, ঘাটাইলের দেওলাবাড়ী গ্রামের আমিনুল, নাজিম উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম, মধুপুরের কালমাঝি গ্রামের খোরশেদ, শাহজাহন ও হাসমত জানান, তারা এলাকা ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে খড়ের গাদা কিনে ভ্যানে ভরে বাজারে এনে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

ধনবাড়ী উপজেলার ভাইঘাট সড়কের খড়ের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আড়ালিয়ার ফজলুর রহমানের এক ভ্যান খড়ের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা হাঁকিয়েছেন ক্রেতা। তার প্রত্যাশা ২ হাজার ৫০০ টাকা। গোপালপুরের নারায়ণপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের খড়ের দাম উঠেছে ২ হাজার ২৫০ টাকা। তিনিও আর একটু বাড়লেই দিয়ে দেবেন।

ফজলুর রহমান ও  আব্দুল হাকিম জানান, প্রতি বছর খড়ের ব্যবসা করে ভালোই আয় করেন তারা। এবার খড়ের টান বেশি বলে ব্যবসাও ভালো যাচ্ছে।

মধুপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মধুপুর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় খড়ের সামান্য অভাব থাকতে পারে। তবে তা প্রকট সংকট নয়।

তার হিসেব মতে, খামারিরা মধুপুর অঞ্চলে ১০/১২ একর জমিতে গরুর জন্য ঘাসের চাষ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।