ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

আবহাওয়ার বাঁধা পেরিয়ে আলু চাষের কর্মযজ্ঞ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
আবহাওয়ার বাঁধা পেরিয়ে আলু চাষের কর্মযজ্ঞ আলুচাষ শুরুতে মাসখানেক দেরি হয়ে যাওয়ায় ব্যস্ততাও বেশি চাষিদের। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: গামলা ভর্তি আলুর বীজ নিয়ে ক্ষেতে হাঁটু গেড়ে বসেছেন গাজিউর রহমান। খালি গা, পরনে লুঙ্গি। সূর্যের তাপ সরাসরি শরীরে পড়ায় পুড়ে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে।

কিন্তু সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই এই জাত কৃষকের। গভীর মনোযোগে ক্ষেতের ভেতর দিয়ে করা সরু লাইনে বীজআলু বপণ করছেন তিনি।

পেছনেই খানিকটা দূরে একই কাজ করছেন আরও চারজন কৃষক।

এভাবেই কাকডাকা ভোর থেকে ক্ষেতে আলু আবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। চলতি রবি মৌসুমের শুরুর দিককার খারাপ আবহাওয়ায় বীজআলু বপণে মাসখানেক দেরি হয়ে যাওয়ায় তাদের তাড়াহুড়া আরও বেশি।

বগুড়ার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তুলনামূলক উঁচু জমিতে আলুর আবাদ করছেন চাষিরা। তারা জানান, আলু চাষে প্রয়োজন শুকনো মাটির জমি। রোপা আমন কাটার পর ওই জমিতেই আলুর আবাদ করা হয়। কিন্তু গত মাসের শেষ দিকে বৃষ্টি হওয়ায় চলতি মৌসুমের আমনসহ বিভিন্ন উঠতি ফসলি জমিতে পানি জমে যায়। হালকা থেকে ঝড়ো বাতাসে ক্ষেতের কিছু ফসল মাটিতেও পড়ে যায়। এতে করে অনেকটা বিপাকে পড়ে সময়মতো আলুবীজ লাগাতে পারেননি তারা। ফলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে কিছুটা দেরিতে চাষে নামতে বাধ্য হয়েছেন।

বগুড়া সদর উপজেলার শাখারিয়া, শেখেরকোলা, মাটিডালিসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ চাষিই ধান কাটার পর আলু লাগাতে সেই জমি প্রস্তুত করছেন। পাওয়ার টিলার দিয়ে মাটি সমান করতে ক্ষেতে মই দিচ্ছেন কেউ কেউ। কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে বা হাতলাঙলের ব্যবহারে এ কাজ সারছেন অন্যরা। জমি প্রস্তুত করতে পেরেছেন যারা, তারা সরু লাইন তৈরি করে তার মাঝে আলুবীজ বপণে ব্যস্ত।

আলুবীজ বপণে ব্যস্ত চাষিরা।  ছবি: বাংলানিউজতবে আলু চাষের এ কর্মযজ্ঞের মাঝেও চিন্তিত অনেকে। কারণ, সিংহভাগ জমিতে এখনো ধান রয়েছে। কবে ধান কাটা হবে, কবে জমি প্রস্তুত করা যাবে?- তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ওই চাষিরা।
 
আজগর আলী, লুৎফর রহমান, মোফাজ্জল হোসেনসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, এবার মৌসুমের শুরুতেই আলু চাষে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহাওয়া। এ কারণে মাসখানেক পিছিয়ে পড়েছেন তারা।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ‘রবি মৌসুমের আলু সাধারণত অক্টোবর মাসের প্রথম থেকেই লাগানো শুরু হয়। কিন্তু এবার প্রতিকূল আবহাওয়ায় অনেক জমির ধান কেটে শেষ করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে আলুর জমিও প্রস্তুত করতে পারছেন না। এতে আলু লাগাতে সময় নিতে হচ্ছে তাদেরকে’।
 
‘তবে জেলার বেশ কিছু উপজেলার উঁচু জমিতে আলু লাগাতে পেরেছেন চাষিরা। অনেকে আলু লাগাচ্ছেন, বাকিরা জমি প্রস্তুত করছেন। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আলু লাগাতে পারবেন কৃষকেরা’।

‘তবে এবারের আবহাওয়া নিয়ে কৃষকদের মতো কৃষি বিভাগও বিপদের মধ্যে আছে’- বলেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
এমবিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।