তাদের অনুসন্ধানী চোখ শুধু ইঁদুরের কেটে নিয়ে যাওয়া ধানের নাড়ার ফাঁক দিয়ে মাটির দিকেই নয়, খালি মাঠেও। ইঁদুরের গর্ত কিংবা ঝরেপড়া ধান দেখলেই চোখে-মুখে ফুটে উঠছে হাসি।
অভাবি ও গরিব পরিবারের এসব ধানকুড়ানিদের নেই ভিটে-মাটি, নেই জমি-জিরেত। তাইতো এসব ধান বিক্রি কিংবা পিঠা-পুলি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন তারা, পূরণ করছেন জীবনের শখ-আহলাদও।
নীলফামারী জেলার সর্বত্র আমন ধান কাটার মৌসুম চলছে পুরোদমে। প্রতি মৌসুমের মতো এবারও চাষিরা ফসল ঘরে তোলার পর খালি মাঠে পড়ে থাকা ও ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান তুলতে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য দরিদ্র মানুষকে।
সরেজমিনে গেলে ধান কুড়ানিরা জানান, কৃষকের ক্ষেত থেকে ধানের শীষ কেটে নিয়ে আপদকালীন খাদ্য হিসাবে গর্তে মজুদ রাখে ইঁদুরেরা। সেসব গর্ত খুঁড়ে ইঁদুরের খাবার বের করে নেন তারা। মাটি থেকে একটি একটি করে ধান কুড়িয়েও সঙ্গে আনা ডালায় ভরেন।
মৌসুমের পুরো সময়টায় এভাবেই ধান কুড়াচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন এসব অভাবি মানুষেরা।
বলাই চন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমনের পুরো মৌসুমে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান বের করে আনি। গত বছর এভাবে ১৮ মণ ধান জমা করেছিলাম। সে ধান বিক্রির টাকা আমার সংসারের অনেক উপকারে লেগেছে’।
স্কুলপড়–য়া মনু (১০) ও আজহার আলী (৮) বলে, ‘স্কুল থেকে এসে ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ও কুড়িয়ে ধান সংগ্রহ করি। এগুলো বিক্রি করে মা-বাবারা সংসারের কাজে লাগান। কখনো কখনো পিঠা তৈরি করেও খাই’।
তারা আরও বলে, ‘ধান কাটার সময় মালিক ক্ষেতে নামতে দেন না। কেটে নিয়ে যাওয়ার পর পড়ে থাকা ধানগুলো কুড়িয়ে থাকি। ইঁদুরের গর্ত খুঁড়েও বের করে আনি’।
‘গর্তে সাপ, পোকা-মাকড় থাকতে পারে, ভয় লাগে না?’- জবাবে শিশুরা বলে, ‘ভয় তো হয়ই। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ, এছাড়া উপায় কি?’
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এএসআর