ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

চরের জমিতে সবুজের হাতছানি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭
চরের জমিতে সবুজের হাতছানি সরিষার ক্ষেত-ছবি-বাংলানিউজ

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার পদ্মাবেষ্টিত একমাত্র জনপদ চরজানাজাত ইউনিয়ন। জেলার শিবচর উপজেলার অনত্যম বৃহৎ এই ইউনিয়নটির পুরোটাই দীর্ঘকাল আগে জেগে উঠা পদ্মার চর। ধীরে ধীরে জনবসতি বেড়ে লোকালয়ে পরিণত হয়েছে মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই চর। এই চর ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট শতাধিক গ্রাম। কিছুদিন আগে বর্ষা মৌসুমে থৈ থৈ জলে নিমজ্জিত ছিল ইউনিয়নটি। প্রমত্ত পদ্মার খেয়ালিপনায় উজার হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। বসতভিটা হারিয়ে চর ছেড়ে মূল ভুখণ্ডে এসে আশ্রয় নিয়েছে শত শত মানুষ।

শীত মৌসুমে পানি কমে শুকিয়ে এসেছে চরের মাঠঘাট। একরের পর একর জমিতে এখন সবুজের হাতছানি।

মাঠে মাঠে কৃষকের ব্যস্ততা। বর্ষায় ঘরবাড়ি হারিয়ে চর ছেড়ে যাওয়া মানুষেরাও ছুটে এসেছে ফসলি জমিতে। ফসল ফলানোর ব্যস্ততায় কষ্ট কিছুটা লাঘব হচ্ছে তাদের।

সরেজমিনে পদ্মার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, উর্বর মাটিতে ফসল ফলানোয় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। কারও নিজ জমি, আবার কেউ খাজনা করে শীতকালীন ফসল বুনছেন জমিতে। কলাই, সরিষা, মুগ, ফুলকপি, পালং শাক, লাল শাক, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, খিরা, ধনে পাতাসহ নানা রকম ফসল মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে চরের জমিতে।

মরিচ ক্ষেত্রে ব্যস্ত চাষি-ছবি-বাংলানিউজকৃষকেরা জানান, কৃষিকাজ, পশুপালন আর মাছ ধরাই চরের মানুষদের জীবিকার প্রধান উৎস। চরের জমিতে পেঁয়াজ, রসুনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এরপরই আসে ধানের আবাদ। পানি সহনশীল ধানে বর্ষা মৌসুমে চরের জমি ঢাকা পড়ে যায়। এছাড়া শীতকালের প্রথম দিকে নানা ধরনের সবজি চাষ করেন এখানকার মানুষেরা। মূল জমি ছাড়াও বাড়ির আঙিনায় নানা জাতের সবজি চাষ করা হয়।

কৃষক আব্দুল মান্নান মিয়া জানান, শীত মৌসুমে চরজানাজাত, মাদবরেরচর, পাঁচ্চরসহ আশপাশের হাটবাজারে যেসব সবজি বিক্রি হয় তার বেশিরভাগই এই চরের জমিতে উৎপাদিত। দেশি হিসেবে বেশ কদর রয়েছে এখানকার শাক-সবজির। এই চরের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কমবেশি শাক-সবজির চাষ হয়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারগুলোতেও বিক্রি করা হয়।

প্রায় ১২ কাঠা জমিতে মরিচের চাষ করেছেন কৃষক আহমদ আলী। খাজনা করে চরের জমিতে চাষাবাদ করেন তিনি। আলাপকালে তিনি বাংলানিউজকে জানান, চরের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মরিচের আবাদ তেমন হয় না। এ বছরই মরিচের চাষ শুরু করেছি। মাটির উর্বরতার কারণে এখানকার জমিতে এই ধরনের চাষাবাদে তেমন সারের প্রয়োজন হয় না। শুধু নিয়ম অনুযায়ী নিড়ানী দিয়ে রাখতে হয়। এবছর ভালো ফলন আশা করছি।

ফসলের জন্য চাষ করা জমি-ছবি-বাংলানিউজতিনি আরও জানান, এ জমিতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছি। আর মরিচের ফলন আসা পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে। মরিচ শেষ হলে এই জমিতে ধানের আবাদ শুরু হবে বলে তিনি জানান।

শিবচর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে নানা জাতের ফসল উৎপাদন হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের বিভিন্ন ফসলের বীজও অফিস থেকে দেওয়া হয়। চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসল ওই অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। চলতি মৌসুমে চরজানাজাত ইউনিয়নের চরাঞ্চলে প্রায় দেড়শ হেক্টর জমিতে চারা বপন করা হয়েছে।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, চরজানাজাতসহ পদ্মার আশপাশের এলাকার চরাঞ্চলগুলোর মাটি উর্বর থাকায় বেশ ভালো ফসন ফলেছে। নানা জাতের শস্যের পাশাপাশি শাকসবজির চাষও হয় এ অঞ্চলে। আমাদের অফিস থেকেও ফসল উৎপাদনে নানা পরামর্শ দিই।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।