ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

বাদলের কেঁচো সার

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
বাদলের কেঁচো সার বাদলের যত্নে লালিত কেঁচো সার। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ‘প্রকৃতির লাঙল’ হিসেবে বিবেচিত কেঁচোরাই বাদলের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কেঁচো সার তৈরিতে এলাকার একজন সফল চাষি তিনি। নিজের উৎপাদিত কেঁচো সার বিক্রি করে সংসারে এসেছে সফলতা।
 

যেসব কৃষক বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করে অধিক উৎপাদনের বিপরীতে ধীরে ধীরে নিজ জমির উর্বরতা-শক্তি হারাচ্ছেন তাদের জন্য ‘কেঁচো-সার’ নিঃসন্দেহে একটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।
 
শ্রীমঙ্গলে কয়েকজন কৃষক শুরুতে এই কেঁচো সার উৎপাদনে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও বর্তমানে তাঁরাই ‘কেঁচো-সার’কেই ‘উত্তম জৈব সার’ বলে দাবি করছেন এবং নিজের উৎপাদিত ফসলে এই সার প্রয়োগ করে সন্তোষজনক উৎপাদনের প্রমাণও পেয়েছেন।

 
 
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর ভাড়াউড়া এলাকার মাঝেরগাঁও গ্রামের বাদল পালের বসতবাড়িতে ‘কেঁচো সার উৎপাদন প্লান্ট’ রয়েছে।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর আমাদের গ্রামে আমিসহ গোপাল দেব, নিরঞ্জন দেব, সুমন্ত দেব, মানিক দেব, প্রদীপ দেব এবং পঞ্চম কাহার এই ৭ জনের বাড়িতে কেঁচোর মাধ্যমে জৈব সার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। এর মধ্যে সুমন্ত এবং আমি এটি সাত বছর ধরে রেখেছি।
 
বাদল পাল বলেন, ‘প্রথমে আমি এই কেঁচো-সারকে গুরুত্ব দেইনি। তারপর কৃষি জমিতে ব্যবহারের পর যখন দেখলাম টমেটো গাছগুলোতে দারুণ ফলন এসেছে তারপর আমার ধারণা পরিবর্তন হলো। আগে টমেটো গাছে সে রাসায়নিক সার দিয়েছিলাম সেগুলো থেকে এই সার খুবই উত্তম। এই সারের স্থায়ীত্ব বেশি হওয়ায় টমেটোর ডালগুলো খুব শক্ত হয়েছে। আর এ জৈব সার ব্যবহারে উৎপাদন খরচও কম।

বাদলের যত্নে লালিত কেঁচো সার।  ছবি: বাংলানিউজ 
 
তিন মাস পরপর প্রায় দশ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করে থাকি বলেও জানান বাদল পাল।
 
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গোলাকৃতির কেঁচো সার উৎপাদন প্লান্টে ৪০-৪৫ কেজি পচা গোবর ফেলে এর মধ্যে ওই কেঁচোগুলো মিশ্রিত করে দেওয়া হয়। । ২০-২২ দিন পর কৃষকরা ৩০-৩৫ কেজি করে কেঁচো সার পেয়েছেন। ওই পচা গোবর-ই কেঁচো’র একমাত্র খাদ্য। কেঁচোগুলো ওই খাদ্য খেয়ে যে মল ত্যাগ করে সেটাই হলো কেঁচো সার বা জৈব সার।
 
আরো জানা যায়, প্লান্টের ওপরে সূর্যালোক এড়ানোর জন্য একটি ছাউনি দেওয়া হয়। তাতেই নিচের স্থানটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর্দ্রতা ও অন্ধকারময় পরিবেশই কেঁচোর জন্য উপযুক্ত। প্রতিটি প্লান্টেই শত শত কেঁচো বসবাস করে এবং ডিম ফোটায়। এভাবেই তাদের বংশবিস্তার এবং জৈব সার উৎপন্ন এ দুই বিষয়ই সমানভাবে চলে।  
 
শ্রীমঙ্গল উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমার পাল বলেন, ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ অর্থাৎ এ কেঁচো সারের বিশেষত্ব হলো এটি হিউমাস সমৃদ্ধ জৈব সার। এটি মাটির উর্বরতা ও গাছের বৃদ্ধিসহ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং মাটির লবণাক্ততা কমায়। এছাড়াও এই সার মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায় এবং এটি রাসায়নিক বিষমুক্ত। এ জৈব সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়।
 
কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, শ্রীমঙ্গলে কেচো সার উৎপাদনকারী কৃষকদের মধ্যে বাদলই অভিজ্ঞ। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সে এটি ধরে রেখেছে।
 
সবদিক বিবেচনায় এ পরিবেশবান্ধব জৈব সার আমাদের কৃষির জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়ে উঠতে পারে। আমাদের কৃষির স্বার্থে এ সারের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন বলে জানান অজিত কুমার পাল।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
বিবিবি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।