ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

মহেশখালীর মিষ্টি পান এখন তিতা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৮
মহেশখালীর মিষ্টি পান এখন তিতা! মহেশখালীর পান। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: সাগরপাড়ে দেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ মহেশখালী। বাঁকখালী আর মাতামুহুরি নদীর পাড়ে পাহাড় বেষ্টিত মহেশখালীর নাম বিদেশ-বিভূঁইয়েও শোনা যায় সেখানে উৎপাদিত মিষ্টি পানের বদৌলতে।

কুহুলিয়া নদী আর সাগরপাড়ের প্রজাপতি বনের এই উপজেলার মিষ্টি পানের সুবাসে মুগ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষ গেয়েছিলেন, ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম/ মইশাইল্যা পানের খিলি তারে বানাই খাওইতাম’। কিন্তু স্বাদ আর গন্ধের সুমিষ্ট এই পান উঁচু দরের কারণে অনেকটাই তেতো হয়ে গেছে!

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে যাওয়া, প্রয়োজনীয় উপকরণ ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় পানের দাম বেড়েই চলছে।

দাম বাড়ার কারণে অনেক দোকানদার খিলি পান বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে হাসছে না কৃষকের মুখ।

কক্সবাজার জেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, জেলায় অন্তত ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে মহেশখালীতে ১৬০০ হেক্টর; চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ১৪০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। পাহাড়ি জমিতে যে পান চাষ হয় তার হিসাব কৃষি বিভাগে নেই।

তবে পাহাড়ে অন্তত ৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে পান চাষ হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

মহেশখালী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাইছারুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরে মহেশখালীতে ১৬শ’ হেক্টর জমিতে মিষ্টি পানের ভালো ফলন হয়েছে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই প্রশংসনীয়। তবে এর মধ্যে অর্ধেক মৌসুমি পানের চাষ।

পানের বাম্পার ফল হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কৃষি বিভাগ পান চাষিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে। কোনো মড়ক দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে সহযোগিতা ও পরার্মশ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মড়কের ব্যাপারে চাষিদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

তবে পানের বাম্পার ফলনেও হাসি নেই চাষির মুখে। পান চাষের উপকরণ শন, উল, বাঁশ, কীটনাশক, সার, খৈল ইত্যাদির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পান চাষ করতে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন পড়ছে। পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি ও যাতায়াত খরচ বৃদ্ধির কারণে মিষ্টি পান এখন তেতো স্বাদ নিয়েছে চাষিদের কাছে।

পান চাষি সমিতির উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, মহেশখালীর পানের বরজ সাধারণত দুই ধরণের- পাহাড়ি বরজ এবং বিল বরজ। উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের ঢালু ও সমতল কৃষি জমিতে যুগ যুগ ধরে পান চাষ করে আসছে স্থানীয় পানচাষিরা। জমির শ্রেণী অনুসারে পাহাড়ি এলাকার ভূমিতে পান চাষ দুই/তিন বছর স্থায়ী হলেও সমতল জমিতে পান চাষ হয় মাত্র ছয় মাস। সমতল জমিতে সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়ে মে/জুনে শেষ হয়। অপরদিকে পাহাড়ি ঢালু জমিতে পান চাষ হয় বছরের যেকোন সময়।

কালারমারছড়ার পান চাষি সৈয়দুল কাদের বলেন, মহেশখালীতে দুই ধরনের পান চাষ হয়ে থাকে। একদিকে সারা বছরই হয় অন্যদিকে মৌসুমি পান চাষ। এখন মৌসুমি পান চাষের সময়। এই সময় পানের দাম বেশি থাকে এবং পানের উৎপাদন বেশি হয়।

এক একর জমিতে পান চাষ করতে কমপক্ষে ৬ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানান পান চাষি সৈয়দুল কাদের।

ছোট মহেশখালীর পান চাষি আবদুর শুক্কুর বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে পানের মূল্য আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে মৌসুমের শুরুতে প্রতি বিরা বড় মিষ্টি পান ৫০০ টাকা থেকে ৪৪০ টাকা দামে বিক্রি হয়। মাঝার পানগুলি এক বিরা ৪০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট পানগুলি ২৮০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ৪টি পানে হয় ১ গণ্ডা, আর ৪৫ গণ্ডা পানকে ১ বিরা বলা হয়।

মিষ্টি পানের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল বলেন, যেভাবে পানের ফলন হয়েছে সেভাবে যদি দাম স্থিতিশীল থাকে তাহলে কক্সবাজারেই হাজার কোটি টাকার পান উৎপাদন সম্ভব হবে।

এদিকে বর্তমানে কক্সবাজার জেলা ছাড়াও চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা ও ঢাকায় পান সরবরাহ হচ্ছে। এসব এলাকায় মিষ্টি পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া মহেশখালীর পান সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হয়।

মহেশখালী পান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির মোহাম্মদ মিয়া বলেন, পান রপ্তানিতে অনেক ধরনের বাধা রয়েছে। যদি সরকার এই বিষয়ে একটু সুনজর দেয় তবে বৈদশিক মুদ্রা অর্জন করা সহজ হবে। এছাড়া পান চাষিদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয় তবে পানের উৎপাদন অনেক বাড়বে।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ ক ম শাহরিয়ার বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে পান চাষিদের শুধুমাত্র কারিগরি সহযোগিতাই দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৮
টিটি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।