ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সবজি হিসেবে কদর বাড়ছে অ্যাসপারাগাসের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৮
সবজি হিসেবে কদর বাড়ছে অ্যাসপারাগাসের মাঠে চাষ করা হচ্ছে অ্যাসপারাগাস (ফাইল ছবি)

ঢাকা: অ্যাসপারাগাস লিলি গোত্রের বহু বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এর চাষ নতুন হলেও ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, চীন ও কোরিয়ায় বহুল ব্যবহৃত সবজি। ওষধি গুণের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোতে অ্যাসপারাগাসের কচি কাণ্ড বহুল সমাদৃত। বাড়ির ছাদে বড় টবে বা মাঠে চাষ করা যায় গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটি।

বর্তমানে বগুড়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বাণিজ্যিকভাবে এ বিদেশি সবজিটির চাষ হচ্ছে। তবুও দেশের চাহিদা মেটাতে অ্যাসপারাগাস বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

একবার অ্যাসপারাগাস লাগিয়ে প্রায় ৪০ বছর ফলন পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবজিটির চাষ বাংলাদেশে জনপ্রিয় করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসপারাগাসের বাংলাদেশে উৎপাদন উপযোগিতা, উৎপাদন পদ্ধতি ও পুষ্টিমান নিয়ে গবেষণা চলছে। গবেষণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ ফয়েজ এম জামাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, জাপান থেকে ২০০৭ সালে অ্যাসপারাগাসের চারটি জাত এনে গবেষণা করছি। এর মধ্য থেকে একটি জাত বাংলাদেশের আবহাওয়াতে চাষের উপযোগী। এ জাতটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়েলকাম ঢাকা’।

গবেষক বলেন, অ্যাসপারাগাস মূলত প্রোটিনসহ ভিটামিন বি-৬, এ, সি, ই, কে, থায়ামিন, রিভোফ্লাভিন, ফলিক এসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ। অ্যাসপারাগাসে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদ-প্রোটিন হিস্টোন এবং গ্লটাথিয়ন থাকে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং দেহের টনিক হিসেবে কাজ করে। ফলিক এসিড থাকার কারণে অ্যাসপারাগাস হার্টের ব্লক সৃষ্টিতে সরাসরি বাধা দেয়।  

প্রতিদিন ২ বার সকাল ও সন্ধ্যায় ২-৩টি অ্যাসপারাগাস স্টিক খেলে ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই এর কার্যকারিতা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
 
কিভাবে খাবেন
জাপানে মেয়নেজ মিশ্রিত আলু ভর্তায় অ্যাসপারাগাস ব্যবহার করা হয়। তবে ফ্রাই প্যানে হালকা তেলে ভেজে বা ভাঁপে সিদ্ধ করে অ্যাসপারাগাস সহজেই খাওয়া যায়। এছাড়া মুরগি বা গরুর মাংস অথবা চিংড়ির সঙ্গে বিভিন্ন সস দিয়ে রান্নায় অ্যাসপারাগাস দিলে বেশ সুস্বাদু হয়। পুষ্টি গুণে ভরা অ্যাসপারাগাস সালাদ, নুডুলস ও খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চাষ পদ্ধতি
স্ত্রী অ্যাসপারাগাস থেকে ফুল ও ফল হয়। ফল পেঁকে লাল হলে বীজ সংগ্রহ করা যায়। বীজ থেকে সহজেই চারা উৎপাদন করা যায়। বীজ থেকে চাষ শুরু করলে প্রথম বছরে ৪-৫টি কাণ্ড বের হয়। প্রথম বছরেই কাণ্ড সংগ্রহ করলে পরবর্তী বছরে কাণ্ডের সংখ্যা কমবে। কিন্তু প্রথম বছর না কেটে গাছটির যত্ন করলে পরবর্তী বছরে প্রায় ১০-১২টি কাণ্ড সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া অ্যাসপারাগাসের শিকড় দিয়েও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়।

অ্যাসপারাগাস পর্যাপ্ত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে ভালো হয়। মাটির পিএইচ মাত্রা ৬-৭ এ অ্যাসপারাগাস ভালো হয়। জমি তৈরির সময় পরিমাণ মতো চুন দিয়ে নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে গোবর সার ও খৈল গুঁড়া দিতে হবে।

মার্চ মাসের দিকে কচি কাণ্ড বের হতে শুরু করলে জুলাই মাসের শেষের দিকে বছরে ২ বার ইউরিয়া:টিএসপি:এমপি সার ১:১:২ অনুপাতে প্রতিবার হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি সার মাটির উপরিভাগে ছিটিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। বর্ষায় জমিতে কোনভাবেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না, শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানিসেচ দিতে হবে।

কচি কাণ্ড সংগ্রহের পদ্ধতি
অ্যাসপারাগাসে সাধারণত স্ত্রী ও পুরুষ দুই ধরনের গাছ দেখা যায়। পুরুষ গাছে উন্নত মানের কচি কাণ্ড উৎপাদিত হলেও স্ত্রী গাছে কচি কাণ্ড খুব কম হয়। কচি কাণ্ডগুলো ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং পেন্সিলের মতো মোটা হলেই ধারালো ছুরি দিয়ে গোড়া থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার উপর থেকে কেটে নিতে হবে। দ্বিতীয় বছর থেকে গড়ে ৮-১০টি কচি কাণ্ড প্রতি গাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কাণ্ডের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।

রোগ ও দমন ব্যবস্থা
ফিউজারিয়াম রট ও ক্রাউন রট অ্যাসপারাগাসের ক্ষতিসাধন করে। তাই বছরে অন্তত ২-৩ বার রিডোমিল বা ডাইথেন স্প্রে করতে হবে। মাটিতে সেভিন ডাস্ট দিলে কচি কাণ্ডে পিঁপড়ার আক্রমণ হবে না। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, নিম তেলের খৈল অথবা জমিতে নিম পাতা গুঁড়া ব্যবহার করলে ফিউজারিয়াম রট কমে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৮
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।