ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সাভারে মাশরুমের জমজমাট হাট

মহিবুল আলম সবুজ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৮
সাভারে মাশরুমের জমজমাট হাট হাট থেকে মাশরুম কিনছেন একজন নারী। ছবি: বাংলানিউজ

সাভার: ঢাকার অদূরে সাভারের সোবহানবাগে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে জমে উঠেছে মাশরুমের হাট। হাটে তিন প্রজাতির মাশরুমের পসরা বসেছে। এই তিনটে প্রজাতি হচ্ছে ওয়েস্টার, বাটন ও ঋষি মাশরুম। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন মাশরুম কিনতে। পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন হওয়ায় আমাদের দেশে দিনকে দিন বেড়েই চলছে মাশরুমের চাহিদা।

বাংলাদেশ মাশরুম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিনই চলে মাশরুমের খুচরা ও পাইকারী কেনা-বেচা।

হাট ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি তাজা ওয়েস্টার মাশরুমের মূল্য ২৫০ টাকা ও শুকনো বা গুঁড়ো ওয়েস্টার মাশরুমের মূল্য ১৪০০ টাকা।

এক কেজি তাজা বাটন মাশরুমের মূল্য ৫০০ টাকা। এক কেজি শুকনো বা গুঁড়ো ঋষি মাশরুম ৪০০০ টাকা। এক কেজি তাজা কান মাশরুম ২০০ টাকায় এবং শুকনো কান মাশরুম ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

মাশরুমের হাটে দেখা মিলল লাকী বেগমের। তিনি তিন জাতের মাশরুমের পসরা নিয়ে বসেছেন হাটে। প্রায় তের বছর ধরে তিনি মাশরুম চাষ করছেন বলে জানান। মাশরুমের হাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।  ছবি: বাংলানিউজমাশরুম চাষের শুরুর দিকটা কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিকে অনেকটা ছোট পরিসরে চাষ শুরু করেছিলাম। তখন মধুর ক্যান্টিন, হিমুর ক্যান্টিন ও আবুলের ক্যান্টিনে মাশরুম বিক্রি করতাম। এখন বড় পরিসরে চাষ করছি। আমার কাছে বিভিন্ন জাতের এক হাজার মাশরুমের বীজ আছে। ঢাকার বিভিন্ন সুপার শপে আমি মাশরুম সরবরাহ করি। এখন প্রতিমাসে প্রায় বিশ হাজার টাকা আয় করি।

মাশরুমের হাট সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে ঢাকা থেকে অর্ডার না এলে মাশরুম বিক্রি করতে পারতাম না। বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় আমাদের একেক সময় একেক জায়গায় বসতে হতো। তবে এখন নির্দিষ্ট জায়গা পেয়ে আমাদের অনেক লাভ হচ্ছে। প্রতিদিনই ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে।  

লাকী বেগমের মতো এখন অনেক অসহায় ও বেকার পুরুষ-মহিলা  মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন। এই ইনস্টিটিউট থেকে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঁচ হাজার পাঁচশ একাশি জন মাশরুম চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব চাষী তাদের উৎপাদিত মাশরুমের একটি অংশ দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করছেন। অবিক্রিত যে মাশরুম বিক্রির জন্য তারা পাঠিয়ে দেন সাভারের এই হাটে। এছাড়া ২৮জন চাষী প্রতিদিনই  তাদের উৎপাদিত মাশরুম এই হাটে বিক্রি করেন।

মাশরুমের এ হাটটির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন  মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ড. নিরোদ চন্দ্র সরকার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বের ছত্রাকবিদরা এ পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ প্রজাতির ছত্রাক শনাক্ত করেছেন। এসবের মধ্যে মাশরুম হলো মানুষের খাওয়ার উপযোগী ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ। মাশরুম চাষ করা সহজ, সাশ্রয়ী ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি হালাল খাবার। বাসাবাড়িতে সহজেই এটি চাষ করা যায়। যারা মাশরুম চাষ করতে চান, আমরা তাঁদের সব ধরনের কারিগড়ি সহায়তা দিয়ে থাকি।

বারডেম-পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওয়েস্টার মাশুরুম লিভার ও কিডনিকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে। এ মাশরুম রক্তের সুগার, কোলেস্টরেল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে, যা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

ইনস্টিটিউটে ঢুকতেই ডান পাশে চোখে পড়বে মাশরুম ফুড কর্ণার। এটি পরিচালনা করছেন সাভারের নবীনগরের কুলসুম বিবি। তিনি বিধবা। তাঁর একমাত্র সন্তান আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। প্রতিদিন এ খাবার দোকান থেকে পনেরশ থেকে দুই হাজার টাকা আয় করেন। এ আয় দিয়েই চলে তাঁর সংসার। এই ফুড কর্নারে তিনি মাশরুম দিয়ে রোল, পাকোড়া, বার্গার, চপ, সমুচা তৈরি করেন। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯ পর্যন্ত দোকান খোলা রাখেন বলে জানান তিনি।

মাশরুম একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন আদর্শ খাবার। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। মাশরুমে প্রায় ২৫ শতাংশ আমিষ রয়েছে। যাতে মানুষের শরীরের জন্য ৯টি অত্যন্ত জরুরি অ্যামাইনো এসিড রয়েছে।

বিভিন্ন মাশরুমের দামঃ তাজা (টাকা)  শুকনো বা গুঁড়ো (টাকা) ওয়েস্টার  মাশরুম ২৫০ ১৪০০, বাটন  মাশরুম  ৫০০,  শুকনো বিক্রি হয় না। ঋষি মাশরুম তাজা বিক্রি হয় না ৪০০০, কান মাশরুম  ২০০ -১২০০।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।